Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

মমতার ‘জোটের মধ্যে জোট’ করার চেষ্টা কি সফল হবে

ভারতে ১০ বছর পর লোকসভা ভোটে বিরোধী জোট তুলনায় ভালো ফল করেছে। এবার মোদিকে মোকাবিলায় তারা কী কৌশল নিচ্ছে?

ভারতে সোনিয়া গান্ধীকেই আবার তাদের সংসদীয় দলের নেতা করেছে কংগ্রেস। তারপর দলের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সোনিয়া বলেছেন, ‘১০ বছর ধরে সংসদকে বুলডোজ করা হয়েছে, উপযুক্ত বিতর্ক ও আলোচনা ছাড়াই বিল পাস করা হয়েছে। সরকারপক্ষ পার্লামেন্টকে অচল করেছে।

এবার আর তা করতে পারবে না বিজেপি। তারা সংসদকে, সংসদের কমিটিগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারবে না।’সোনিয়ার এই আত্মবিশ্বাসের কারণ, এবার বিরোধীরা অনেকটাই শক্তিশালী। বিরোধী ইন্ডিয়ার জোটেরই ২৩৩ জন সংসদ সদস্য আছেন।

ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর জোটের নেতাদের যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, সেখানে সবাই সংসদে ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে মোকাবেলা করার ওপর জোর দিয়েছেন।সোনিয়া বলেছেন, ‘আমাদের সবকিছুর ওপর নজর রাখতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রোঅ্যাকটিভ হতে হবে। এনডিএ সরকার যাতে তাদের সিদ্ধান্তের ও ব্যর্থতার দায় নেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতির দিন চলে গেছে।

ইতিবাচক রাজনীতির দিন এসেছে। মানুষের সমস্যার কথা, তাদের অবস্থার কথাই আলোচনা করতেই হবে।’সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, ‘মোদি মানুষের ইচ্ছার মর্যাদা দেবেন বলে আমার মনে হয় না। মোদির কাজের ধারা বদলে যাবে তা-ও আমি মনে করি না। এই অবস্থায় কংগ্রেসের দায়িত্ব বেড়ে গেছে বলে আমার মনে হয়।

’প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘এবার বিরোধীরা সংসদে মোদি সরকারকে চেপে ধরতে চাইবে। প্রতিটি বিলে বিতর্ক যাতে হয়, তা নিশ্চিত করতে চাইবে। তারা প্রতিটি বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা চাইবে। সরকারও এড়িয়ে যেতে পারবে না। এবার অত সহজে বিরোধীদের বাধাকে অতিক্রম করতে পারবে না সরকার। তবে তার জন্য বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ থাকাটা খুবই জরুরি।’

কংগ্রেসের সঙ্গে কারা আছে?
ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টি, উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা, শরদ পাওয়ারের এনসিপি, আরজেডি, জেএমএমের মতো দলগুলো কংগ্রেসের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে জোটে আছে। বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গে জোট হয়েছিল, কিন্তু কেরালায় হয়নি। এ ছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ছোট দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে আছে।

তৃণমূল : জোটে নেই, ইন্ডিয়ায় আছে?
এ ছাড়া জোটে নেই, অথচ ইন্ডিয়ায় আছে এমন দল হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। ভোটের পর ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে মমতা নিজে আসেননি, অভিষেককে পাঠিয়েছিলেন।

অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টির (আপ) সঙ্গে দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট ও গোয়ায় কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। পাঞ্জাবে হয়নি। ভোটের ফলেফল প্রকাশের পর আপ নেতা গোপাল রাই জানিয়েছেন, দিল্লিতে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তারা আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করবেন না। তিনি আরো বলেন, তাদের জোট লোকসভা পর্যন্ত সীমিত ছিল।

তৃণমূলের চেষ্টা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর আলাদা করে অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও বৈঠক করেন। পরে তিনি আপ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি মুম্বাই গিয়ে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গেও দেখা করেন।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘মমতা জোটের ভেতরে আঞ্চলিক দলগুলোকে একজোট করতে চাইছেন। এরকম চেষ্টা এর আগেও হয়েছে। কিন্তু এখন ওই সব করে লাভ নেই। কংগ্রেসকে প্রধান বিরোধী দল ও জোটের নেতা হিসেবে মেনে নিতেই হবে।’

আশিস মনে করেন, ‘ডিএমকে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে, অখিলেশেরও থাকার কথা। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে থেকে তাদের লাভ হয়েছে। অন্যরাও তাই করবে। ফলে এরকম চেষ্টা হলেও তা ফলপ্রসূ হবে না।’

আর এক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘মমতার নেতৃত্বে তৃণমূলের জন্ম হয়েছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য। সেই কাজটা তারা করে ফেলেছে। তারা আগে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। একমাত্র ভোটব্যাংকের সংঘাত ছাড়া এখনো হাত মেলাতে কোনো অসুবিধা নেই।’

শুভাশিসের মতে, ‘কংগ্রেসের বিজেপিবিরোধীতাটা আদর্শগত, আর মমতার ক্ষেত্রে কৌশলগত।’ তিনিও মনে করেন, ডিএমকে, সমাজবাদী পার্টিসহ অন্য শরিকরা কংগ্রেসের সঙ্গে থাকবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top