বাংলাদেশে ২০২২ সালের চেয়ে ২০২৩ সালে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি হয়েছে। ব্যবসা পরিবেশ সূচক বা বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্সে (বিবিএক্স) এমন চিত্র উঠে এসেছে। ২০২১ সালের সূচকে পয়েন্ট ছিল ৬১ দশমিক ০১ শতাংশীয় পয়েন্ট, ২০২২ সালে বেড়ে হয়েছিল ৬১ দশমিক ৯৫, আর ২০২৩ সালে ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে হয়েছে ৫৮ দশমিক ৭৫।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাজধানীর গুলশানের পুলিশ প্লাজায় অবস্থিত এমসিসিআই’র কার্যালয়ে এই জরিপ প্রকাশ করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ।
প্রতিষ্ঠান দুটি ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৃতীয় বাররের মতো বিবিএক্স জরিপ করল।জরিপটির তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। ব্যবসা শুরু, জমির প্রাপ্যতা, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি, অবকাঠামো সুবিধা, শ্রম নিয়ন্ত্রণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, বাণিজ্য সহজীকরণ, কর পরিশোধ, প্রযুক্তি গ্রহণ, ঋণের প্রাপ্যতা এবং পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান এই ১১ সূচকের ওপর ভিত্তি করে জরিপটি করা হয়েছে। এতে মোট ১২টি খাতকে অন্তর্ভুক্তি করা হয়।
সেগুলো হলো- কৃষি ও বনায়ন, নির্মাণ, ইলেকট্রনিকস ও হালকা প্রকৌশল, আর্থিক মধ্যস্থতাকারী, খাদ্য ও পানীয়, চামড়া ও ট্যানারি, ওষুধ ও রাসায়নিক, আবাসন, তৈরি পোশাক, বস্ত্র, পরিবহন, খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা।জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ করে ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘১১টি সূচকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ঋণের প্রাপ্যতা। সবগুলো সূচকের চেয়ে কম পয়েন্ট পেয়েছে যা মাত্র ২৮ দশমিক ১১। আর সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পেয়েছে অবকাঠামোগত সুবিধা।
এই সূচকের পয়েন্ট ৭১ দশমিক ০৮। এ ছাড়া সূচকের ১০০ নম্বরের ব্যবসা শুরুর সূচকের পয়েন্ট ৬২ দশমিক ৭৪ শতাংশীয় পয়েন্ট, একই ভাবে জমির প্রাপ্যতায় ৫৩ দশমিক ১১, আইনকানুনের তথ্যপ্রাপ্তি ৬৮ দশমিক শূন্য ৪, শ্রম নিয়ন্ত্রণ ৭০ দশমিক শূন্য ৪, বিরোধ নিষ্পত্তি ৬২ দশমিক ৩৮, বাণিজ্য সহজীকরণে ৬০ দশমিক ৮৭, কর পরিশোধ ৫৪ দশমিক ৭৪, প্রযুক্তি গ্রহণ ৬৩ দশমিক ৫০, পরিবেশগত নিয়ন্ত্রণ ও মান সূচকের পয়েন্ট ৫১ দশমিক ৫৯ শতাংশ।’অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এখানে তিন বছরের ডাটা চলে এসেছে। এই প্রতিবেদন আমরা বিশ্লেষণ করে দেখবো কোন কোন জায়গায় আমাদের ঘাটতি আছে। সেখানে কাজ করব।
কভিডের সময়ও আমাদের জিডিপিতে গ্রোথ হয়েছিল ৫ শতাংশের মতো। কিন্তু তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া সব জ্বালানিসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ডলারের দাম এখন ১১৭ টাকা করে দেওয়ার পর বাজার স্থিতিশীল হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। আশা করি জুলাই থেকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।’তিনি বলেন, ‘দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা থাকা দরকার। আমাদের এত বড় অর্থনীতির তুলনায় পুঁজিবাজার আরো শক্তিশালী থাকা দরকার। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, এক্সচেঞ্জ কমিশন সবার সঙ্গে কথা বলছি। প্রধানমন্ত্রীও চান আমাদের পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী করতে। তাই পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুঁজিবাজার আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
রাজস্ব আয় বাড়াতে কর হার কমানো উচিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে এখনো বড় চ্যালেঞ্জ এনবিআর। বারবার বলা হচ্ছে, করজালের আওতা বাড়িয়ে করহার কমিয়ে দিলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে। কিন্তু তারা প্রতিবার যারা কর দিচ্ছে, তাদের আরো বেশি চাপে ফেলা হচ্ছে। আসলে সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। এই বাজেটে নতুন ধরনের সংস্কার আসবে। আমাদের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও গতবছরের তুলনায় কমেছে। এটা আমাদের জন্য একটি সমস্যা। এ সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। সরকার ব্যবসাবান্ধব, আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ দরকার। সামনে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করলে অনেক দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে।’
অনুষ্ঠানে এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে বোঝার জন্য এই জরিপ করা হয়েছে। কোন খাতে কেমন নীতি গ্রহণ করা দরকার, সে বিষয়ে ধারণা দিতেই এই জরিপ। নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বুঝতে পারবেন, তাদের কোন পথে চলতে হবে। কিভাবে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, এফআইসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট জাভেদ আক্তার, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া প্রমুখ।