Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

যা যা লাগবে সঞ্চয়পত্র কিনতে

অনেকের কাছে বিনিয়োগের পছন্দের নাম সঞ্চয়পত্র। যেখানে অর্থ থাকে ‘নিরাপদ’, মুনাফা পাওয়া যায় বেশি। তাই ঝামেলামুক্ত বিনিয়োগের জন্য জাতীয় সঞ্চয়পত্রকে বেছে নেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন স্কিমে সঞ্চয়পত্র ভেদে মুনাফার হারে আছে তারতম্য। তবে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় এমন স্কিমে বিনিয়োগকারীদের বেশি আগ্রহ।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে বর্তমানে ১১টি সঞ্চয় স্কিম চালু আছে। এগুলোর মধ্যে ৪টি সঞ্চয়পত্র, ২টি ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাব, ১টি প্রাইজবন্ড, ১টি ডাক জীবনবিমা এবং ৩টি প্রবাসীদের জন্য বন্ড। তবে সব কর্মসূচিতে বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ বা মুনাফার হার এক নয়। সুদের ওপর করহার ভিন্ন ভিন্ন।

দেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্রের মধ্যে রয়েছে- ১. পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র; ২. তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র; ৩. পরিবার সঞ্চয়পত্র ও ৪. পেনশনার সঞ্চয়পত্র।

 

পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৫ বছর। এখানে একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী এবং সন্তানরা পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

পরিবার সঞ্চয়পত্র

গ্রাহকদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় পাঁচ বছরমেয়াদি ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’। সরকার পেনশনারদের জন্য সবচেয়ে বেশি মুনাফা দিলেও এর পরই অবস্থানে পরিবার সঞ্চয়পত্র। মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যায় ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ হারে। পরিবার সঞ্চয়পত্রে একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। এ ছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা মাসিক কিস্তিতে তোলা যায়।

১৮ বছরের বেশি যেকোনো বাংলাদেশি মহিলা, যে কোনো বাংলাদেশি শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও মহিলা) এবং ৬৫ বা তার তদূর্ধ্ব যে কোনো বাংলাদেশি (পুরুষ ও মহিলা) নাগরিকরা এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ সঞ্চয়পত্রেও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ, এর বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ। বাংলাদেশি নাগরিক যে কেউ এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন। একক নামে ৩০ লাখ যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যাবে। পাঁচ বছরমেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র শুধু সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে কেনা যাবে।

৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র

৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। যেকোনো শ্রেণিপেশার নাগরিক এটি কিনতে পারেন। এ সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ ৩ বছর।

সব শ্রেণিপেশার বাংলাদেশি নাগরিক ক্রয় করতে পারবেন এই সঞ্চয়পত্র। অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/অন্য যেকোনো অটিস্টিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান (যাদের সঞ্চয়পত্রের মুনাফা অটিস্টিকদের সহায়তায় অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে) যা সংশ্লিষ্ট জেলা সমাজসেবা কার্যালয় কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত।

প্রবাসীদের বন্ড

প্রবাসীদের জন্য তিনটি বন্ড রয়েছে। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডের মেয়াদ তিন বছর। এর মুনাফার হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রবাসীদের জন্য আরেকটি বন্ড রয়েছে, যার নাম ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। এ বন্ডে বিনিয়োগে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। তবে তিনটি বন্ডের বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া মুনাফা করমুক্ত রয়েছে।

এ ছাড়া ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত পুরস্কার পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতি তিন মাস পরপর ড্র হয়। এর ওপর উৎসে কর ২০ শতাংশ।

ডাকঘর সঞ্চয়

ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের আওতায় দুটি স্কিম রয়েছে। একটি সাধারণ হিসাব, অন্যটি মেয়াদি হিসাব। দেশের সব শ্রেণিপেশার বাংলাদেশি নাগরিকই এ দুই স্কিমে বিনিয়োগ করতে পারেন। সাধারণ হিসাবের ক্ষেত্রে মুনাফার সরল হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। মেয়াদি হিসাব তিন বছরের জন্য।

ডাক জীবনবিমায় পলিসি দুই ধরনের। একটি আজীবন ও অন্যটি মেয়াদি। যেকোনো নাগরিক যেকোনো ডাকঘরে ‘ডাক জীবনবিমা’ পলিসি করতে পারেন। পলিসির কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। আজীবন বিমার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষে বছরে বোনাস পাওয়া যায় প্রতি লাখে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর মেয়াদি বিমার ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে পাওয়া যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা বোনাস। এ বোনাস করমুক্ত।

কীভাবে কিনবেন সঞ্চয়পত্র

সব ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য নির্দিষ্ট ফরম রয়েছে। ওয়েবসাইট (nationalsavings.gov.bd) থেকে ডাউনলোড করেই এ ফরম পাওয়া যায়। সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে গ্রাহকদের প্রথমে এ ফরম পূরণ করতে হয়, সঙ্গে দিতে হয় গ্রাহক ও নমিনির পাসপোর্ট আকারের দুই কপি করে ছবি। গ্রাহকের ছবি সত্যায়িত করবেন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তার মাধ্যমে। আর নমিনির ছবির সত্যায়ন করবেন গ্রাহক নিজেই।

সঞ্চয়পত্র কেনার সময় গ্রাহক ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি বাধ্যতামূলক। তবে নমিনি যদি নাবালক হয় তাহলে জন্মনিবন্ধনের কপি লাগবে। পাশাপাশি লাগবে গ্রাহকের নিজ ব্যাংক হিসাবের চেকের কপি, যে অ্যাকাউন্টে গ্রাহকের মুনাফা ও আসল টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে, ওই হিসাবের নম্বর দিতে হবে। পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে বাড়তি কাগজ হিসেবে লাগে সর্বশেষ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সনদ।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এর ব্যবস্থাপনায় বেশকিছু পরিবর্তন এনেছে সরকার। কারণ সাধারণ মানুষের কাছে সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিনিয়োগ হলেও সরকারের কাছে এটি ঋণ। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা পরিশোধ করতে হয়। তাই সঞ্চয়পত্রে নানা শর্ত দিয়েছে সরকার।

সঞ্চয়পত্রে শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- এখন পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে গ্রাহকের বাধ্যতামূলক আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সার্কুলার জারি করে জানায়, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসাবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২২-এর ৪৮ ধারা যথাযথ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা টাকা ১০ লাখ অতিক্রম করলেও রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে ব্যাংকে। এ কারণে একশ্রেণির গ্রাহক সঞ্চয়পত্র বিমুখ হচ্ছেন।

এছাড়া চলতি অর্থবছরের বাজেটে দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোস্টাল সেভিংস কিনতে হলে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নতুন নিয়মে একক নামে ৫০ লাখ এবং যৌথ নামে ১ কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। গ্রাহক পেনশনার হলে একক নামে এক কোটি এবং যৌথ নামে দেড় কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top