ইউক্রেনের বন্দর অভিমুখে আসতে থাকা জাহাজগুলোকে সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে হামলার জন্য বিবেচনা করা হবে, রাশিয়ার এমন ঘোষণার পর থেকেই বিশ্ব বাজারে গমের দাম বেড়ে গেছে। কৃষ্ণ সাগর দিয়ে শস্যবাহী জাহাজের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য জাতিসংঘের উদ্যোগে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেটি থেকে গত সোমবার মস্কো বেরিয়ে যাবার পর এই অচলাবস্থা তৈরি হলো। খবর বিবিসির।
এদিকে গত তিনটি রাত রাশিয়া কৃষ্ণসাগরের তীরে অবস্থিত ইউক্রেনের ওডেসা বন্দরের শস্য কেন্দ্রিক অবকাঠামোগুলোতে ব্যাপক বোমা হামলা চালায়। রাশিয়া এ সময় হুমকি দেয়, আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) থেকে সেখানে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোকে কিয়েভ সরকারের পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এডাম হজ জানান, রাশিয়া বেসামরিক জাহাজগুলোকে হামলার পরিকল্পনা করছে আর এর দায় দিতে চাইছে ইউক্রেনকে। তবে এই অভিযোগের বিষয়ে ক্রেমলিন তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
গতকাল বুধবার ইউরোপীয় স্টক এক্সচেঞ্জে গমের দাম আগের দিনের চেয়ে ৮.২ শতাংশ বেড়ে যায়। এ সময় প্রতি টন গমের দাম পৌঁছে ২৫৩.৭৫ ইউরোতে। এ ছাড়া অন্যান্য শস্যের দামও ৫.৪ শতাংশ বেড়ে যায়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে গমের দাম বাড়ে ৮.৫ শতাংশ যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন হামলা শুরুর পর দৈনিক দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ অবস্থান।
এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন যে, তিনি আন্তর্জাতিক শস্য চুক্তিতে দ্রুত ফিরে আসবেন যদি তার দাবিগুলো পূরণ করা হয়। আর এই দাবির মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার শস্য ও সার রপ্তানির ওপর থেকে অবরোধ তুলে নেওয়াসহ দেশটির কৃষি ব্যাংককে বৈশ্বিক বিনিময় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো।
এদিকে কৃষ্ণ সাগরের উপকূলীয় শহরগুলোতে রাশিয়ার বিমান হামলা তৃতীয় রাতের মতো অব্যাহত রয়েছে। ওডেসা ও মিকোলাইভে হামলায় ২০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। মিকোলাইভের আঞ্চলিক গভর্নর ভিটালি কিম জানান, আঞ্চলিক রাজধানীতে একটি এপার্টমেন্ট ব্লকে হামলায় শিশুসহ ১৯ জন লোক আহত হয়েছে। ওডেসাতেও একটি চারতলা ভবনে হামলায় বেশ কয়েকজন লোক আহত হয়।
অন্যদিকে, রাশিয়া অধিকৃত ক্রিমিয়াতেও সারারাত হামলা চলে বলে জানিয়েছে মস্কো থেকে নিযুক্ত ক্রিমিয়ান নেতা সেরগেই আকসোনোভ। উপদ্বীপটির উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে চারটি প্রশাসনিক ভবনে পরিচালিত ড্রোন হামলায় এক কিশোরী মারা যায় বলে জানানো হয়।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শস্য রপ্তানি অবকাঠামোগুলোতে ইচ্ছকৃতভাবে হামলার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি হামলার ফলে দুর্বল দেশগুলোকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার জন্যও রাশিয়াকে দায়ী করেন। দেশটির কৃষিমন্ত্রী মিকোলা সোলস্কি জানান, হামলায় ৬০ হাজার টন শস্য ধ্বংসের পাশাপশি ও রপ্তানি অবকাঠামোর বেশকিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে কৃষ্ণ সাগরে যাতায়াতকারী সবধরনের নৌযানকে ‘সামরিক পণ্য’ পরিবহণের অভিযোগে হামলার লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি যে কোনো দেশের পতাকাবাহী নৌযানকে কিয়েভ সরকারের পক্ষের শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল বুধবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে শস্য চুক্তির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে ব্লাকমেইলিংয়ের অভিযোগ করেন। মস্কো অভিযোগ করে আসছে যে, ইউক্রেন ‘সামরিক উদ্দেশ্যে’ কৃষ্ণ সাগরের শস্য করিডোর ব্যবহার করছে।