আন্তর্জাতিক বাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে সোনা। গত এক সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৩১ ডলার। আগের সপ্তাহে কমে ৩৪ ডলার। এতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৬৫ ডলার।
এ পরিস্থিতিতে দেশের বাজারে সোনার দাম সমন্বয় করতে রোববার (২৮ মে) বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) দায়িত্বশীলরা। ওই বৈঠক থেকে দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে বাজুসের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দেশের বাজারে সবশেষ সোনার দাম সমন্বয়ের পর আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১০০ ডলারের মতো কমে গেছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর একটা চাপ রয়েছে। বাজুসের দায়িত্বশীলরাও আন্তর্জাতিক বাজারের চিত্র নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় বাজারের তেজাবী সোনার (পাকা সোনা) দামকে।
সূত্রটি আরও জানায়, দেশের বাজারে সবশেষ সোনার দাম সমন্বয় করা হয়েছে এক মাসের বেশি হয়ে গেলো। রোববার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি সোনার দাম সমন্বয়ের লক্ষ্যে বৈঠকে বসবে। ওই বৈঠকে আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বাজারের চিত্র পর্যালোচনা করে নেওয়া হবে সিদ্ধান্ত। সার্বিক দিক বিবেচনায় বৈঠকে সোনার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এতে মে মাসেই প্রতি আউন্স সোনার দাম ১০০ ডলার কমে যায়। ৪ মে প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৫৪ ডলার পর্যন্ত উঠে। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে সোনার দাম কমতে দেখা যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে লেনদেন শুরু হওয়ার আগে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৯৭৭ ডলার। সপ্তাহ শেষ তা কমে ১ হাজার ৯৪৫ দশমিক ৯৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৩১ দশমিক ৭ ডলার। আগের সপ্তাহে কমে ৩৩ দশমিক ৭৮ ডলার। অর্থাৎ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৬৫ ডলার।
এর আগে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ার প্রবণতা দেখা যায়। তখন প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৫০ ডলারের কাছাকাছি চলে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ এপ্রিল দেশের বাজারে সব ধরনের সোনার দাম বাড়ায় বাজুস।
সে সময় সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ১৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৮ হাজার ৪৪৪ টাকা করা হয়। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৯৩ হাজার ৯৫৪ টাকা। ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ হাজার ৫৪০ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৮৭৪ টাকা বাড়িয়ে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকা করা হয়।
বর্তমানে দেশের বাজারে এ দামেই বিক্রি হচ্ছে সোনা। আর ক্রেতাদের সোনার গহনা কিনতে এই দামের সঙ্গে ৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ভরিপ্রতি নূন্যতম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা মজুরি গুনতে হচ্ছে। ফলে এক ভরি সোনার গহনা কিনতে খরচ হচ্ছে লাখ টাকার ওপরে।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম কমার বিষয়টি আমরা দেখেছি। তবে সোনার দাম সমন্বয় করি স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দামের ওপর ভিত্তি করে। আগামীকাল আমরা বৈঠকে বসবো। ওই বৈঠক থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।