বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় মোখায় রূপ নিয়েছে। এতে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা, পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় একই দূরত্বে অবস্থান করছিল এটি।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার, বরগুনা, পিরোজপুরসহ উপকূলীয় এলাকায় যত আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে, সবগুলো প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। উপকূলীয় জেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসনও নানা ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ মো. মোনোয়ার হোসেন আজ সকালে সামুদ্রিক সতর্কবাতায় জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল শুক্রবার (১২ মে) সকাল পর্যন্ত উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে এবং পরে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
সামুদ্রিক সতর্কবাতায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় মোখা উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। সর্বশেষ খবরে সংস্থাটি বলছে, এটি আরও ঘণীভূত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মো. মোনোয়ার হোসেন জানান, মোখা আজ বৃহস্পতিবার (১১ মে) বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সবোর্চ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গেপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসন পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমাদের এনটিভি অনলাইনের কক্সবাজার প্রতিনিধি ইকরাম চৌধুরী টিপু। তিনি আরও জানান, কক্সবাজারের সব উপজেলায় খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলার উপকূলীয় এলাকার সব সাইক্লোন শেল্টার ও স্কুলগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখ ৩০ হাজার নগদ টাকা, ৪৯০ মেট্রিক টন চাল, সাত মেট্রিক টন শুকনো খাবার, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউ টিন মজুদ রাখা হয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে আগামী এক সপ্তাহ সাগর উত্তাল থাকবে। গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশ ও লাইফ গার্ডের কর্মীদের তৎপর দেখা গেছে।
সাগর ও সুন্দরবন উপকূলীয় মোংলার প্রায় সোয়া দুই লাখের বেশি মানুষের বিপরীতে আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ১০৩টি। এই অবস্থায় আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় বাসিন্দাদের মধ্যে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় প্রস্তুতি সভা করেছে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসন। এনটিভি অনলাইনের পিরোজপুর প্রতিনিধি রশিদ আল মুনান আরও জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় ২১৩ টিসাইক্লোন শেল্টার কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ১৯৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখার কাজ চলছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, জেলার শ্যামনগর উপজেলার ১৬৩টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ঘূর্ণীঝড় মোখা চলাকালীন ও পরবর্তী সময়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন।
এ ছাড়া নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলীয় জেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত সামলে নিতে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের লোকদের।