যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, বিভিন্ন দেশে সম্পদ গড়েছেন, তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। এসব যে করবে, তাকেই আইনের আওতায় আনার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন প্রশিক্ষণ কোর্স সমাপনীর সনদ বিতরণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও এসবির প্রধান মনিরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সনদ বিতরণ শেষে সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা অবৈধ টাকা পাচার করে সম্পদ গড়েছে বলে গত কয়েক বছর ধরেই শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকার টাকা ফেরত আনা কিংবা তাদের শনাক্ত করার বিষয়ে কী উদ্যোগ নিয়েছে?
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া কিন্তু চালু রয়েছে, এটা বন্ধ নেই। যেই অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার করছে, আমরা তাকেই শনাক্ত করছি। জোর গলায় বলতে পারব না, কে কত টাকা নিয়েছে, কীভাবে নিয়েছে। তদন্ত চলছে। সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ চুরির ঘটনার পরে বর্তমানে এখন কি আমাদের সক্ষমতা হয়েছে এমন ধরনের ঘটনা মোকাবিলা করার। এ ছাড়া সেই আলোচিত মামলার চার্জশিট দ্রুতই জমা দেয়ার কথা ছিল এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে ওই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই দেশ চীন ও শ্রীলঙ্কার তদন্ত রিপোর্ট এখনো পায়নি তদন্তকারী সংস্থা। এ জন্য মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে অপেক্ষা করছে তারা। ওই দুই দেশের মতামত আসলেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এর আগে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিআইডি আজ জনগণের আস্থা ও ভালবাসার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সিআইডি হচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশের প্রযুক্তি, বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা সমন্বিত সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা। জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ড, সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যাকাণ্ড, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা এই বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে তদন্ত করেছে। অর্গানাইজড ক্রাইম, ফরেনসিক বিভাগসহ অন্যান্য ইউনিটগুলোর কর্মদক্ষতা ও কর্মতৎপরতায় সিআইডি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
অনুষ্ঠানে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব বলেন, আধুনিক তদন্ত প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতার মাধ্যমে মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধ কমিয়ে আনা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ভারতের তদন্ত সংস্থা সিবিআই ও আমেরিকান তদন্ত সংস্থা এফবিআই এর মত সিআইডিও বিশ্ব পরিমন্ডলে সুনাম অর্জন করবে।
আইজিপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট গভর্নেন্স। আর স্মার্ট গভর্নেন্সের জন্য প্রয়োজন স্মার্ট পুলিশ গড়ে তোলা। তিনি আরও বলেন, সিআইডি গুণগতমানের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে অফিসারদেরকে দক্ষ করে তুলছেন। ফলে তদন্তের মানে ব্যাপক উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে। সিআইডির তদন্তের নৈপূণ্য বিবেচনা করে মানি লন্ডারিং মামলা তদন্তের দায়িত্ব সিআইডির ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
এসবি প্রধান বলেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত অপরাধ মানিলন্ডারিং, যা প্রতিরোধ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে টেকনোজিভিত্তিক তদন্ত করতে হবে। এই জন্য ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন প্রশিক্ষণ কোর্সটি প্রসংশার দাবিদার।
সিআইডি প্রধান বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুলিশিং এর বিকল্প নাই। স্মার্ট পুলিশ গড়ার লক্ষ্যে গত ১১ অক্টোবর মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন কোর্সের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ৪ মাস ব্যাপী পরিচালিত এই কোর্সের মাধ্যমে ৪৫০ জনকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
সিআইডির তদন্ত কার্যক্রমকে গতিশীল করতে ডিএনএ ফরেনসিক ল্যবের আধুনিকায়ন, ক্রাইম সিন ইউনিটের কার্যক্রম বৃদ্ধি, অর্গানোগ্রাম অনুমোদন এবং হাজতখানা নির্মানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি আরও বলেন, মালিন্ডারিং, হুন্ডিসহ অন্যান্য ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ইউনিটের সাথে সমন্বয় করে সিআইডি যৌথভাবে অভিযান পরিচানা করছে।
মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ ও ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে ৭টি ব্যাচের ৪৫০ জন প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্য থেকে মেধাতালিকার ভিত্তিতে ২১ জন এবং ৪ জন প্রশিক্ষককে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে সিআইডির কর্মকর্তাদের উপস্থাপিত গবেষণাসমূহের সারসংক্ষেপ সম্বলিত ‘রিসার্চ অ্যাবস্ট্রাক্ট’র মোড়ক উম্মোচন করা হয়।