Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

৫ জন গ্রেপ্তার, প্রেমিকাকে গণধর্ষণের অভিযোগে ।

সরাইলে প্রেমিকা মাদ্রাসা ছাত্রীকে (১৪) তুলে নিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছাত্রীর ৫ ধর্ষকের বাড়ি সরাইলের চুন্টায়। আর প্রেমিক ধন মিয়ার (২৫) বাড়ি হবিগঞ্জের হরিরামপুরে। গত ১৩ই আগস্ট গভীর রাতে নরসিংদী এলাকায় নিয়ে পরিত্যক্ত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণধর্ষণ শেষে ফেলে যায়। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ছাত্রীর পিতা স্বজনরা সেখান থেকে উদ্ধার করে আনেন। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ধর্ষিতা। ১৮ই আগস্ট এ ঘটনায় সরাইল থানায় মামলা করেন ছাত্রীর বাবা। মামলা প্রত্যাহার করতে আসামিপক্ষের লোকজনের হুমকিতে আতঙ্কে আছে বাদী ও তার স্বজনরা। পুলিশ ছাত্রীর প্রেমিকসহ ৫ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে শ্রীঘরে পাঠিয়েছেন।

মামলা, ধর্ষিতার পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চুন্টা বাজারের উত্তর পাশে একটি মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী ওই কিশোরী। হবিগঞ্জের হরিরামপুরের ধন মিয়া নামের যুবক চুন্টায় থেকে রাজ ও টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ করে।

একই পেশার স্থানীয় ৪ যুবক ধন মিয়ার বন্ধু। সম্প্রতি ধন মিয়া ছাত্রীর দাদার বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে পরিচয় হয়। পরে ওই বাড়ির দেওয়ালে একটি মুঠোফোন নম্বর লিখে আসে। ছাত্রীর সাথে মুঠোফোনে চলে কথোপকথন। এক সময় গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এর কিছুদিন পরই ধন মিয়া ও তার লোকজন ওই মহিলা মাদ্রাসায় কাজ করে। কাজের চলে ওই ছাত্রীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কথাবার্তা চলে। সম্পর্ক আরো গভীর হয়। অন্যান্য দিনের মত গত ১৩ই আগস্ট সকালে কিশোরী বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাচ্ছিল। চার বন্ধুসহ ধন মিয়া চুন্টা বাজারে কিশোরীর রোধ করে। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ধন মিয়ার নেতৃত্বে চুন্টা বাজার থেকে কিশোরীকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। চলে যায় নরসিংদীর বারৈচা এলাকায়।
সেখানে একটি পরিত্যক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আটকে রেখে তারা কিশোরীকে জোরপূর্বক পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে কিশোরীকে সেখানে ফেলে তারা সকলেই পালিয়ে যায়। ওইদিন রাতেই স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পিতাকে নিজের অবস্থান জানায় ওই কিশোরী। পিতাসহ স্বজনরা গিয়ে গভীররাতে সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। পরের দিন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিশোরীর পিতা বাদী হয়ে সরাইল থানায় একটি মামলা করেন। ১৭ আগস্ট রাতে অভিযান চালিয়ে মূল হোতা ধন মিয়া সহ পাঁচ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে সরাইল থানা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- হবিগঞ্জ জেলার হরিরামপুর গ্রামের আ: জব্বারের ছেলে ধন মিয়া (২৫), চুন্টার আ: আওয়ালের ছেলে শুভ (২১), মুছা মিয়ার ছেলে স্বাধীন মিয়া (২১), আবু ছায়েদের ছেলে দুলাল মিয়া (২২) ও আবদুল্লাহর ছেলে জীবন মিয়া (২০)। ১৮ আগষ্ট তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ছাত্রীর নানা বলেন, আমার মেয়ের মামলার বাদী সিরাজুল কৃষক ও শ্রমজীবী। আসামিদের অভিভাবক ও স্বজনরা মামলাটি প্রত্যাহার করে নিষ্পত্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। নতুবা আসামিরা জেল থেকে আসার পর দেখে নিবে। বাদীর বিরুদ্ধে মামলা করার হমকিও দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কেই আছি।

গতকাল সকালে মাদ্রাসায় গিয়ে দেখা যায়, ইবতেদায়ী শ্রেণির (পঞ্চম) ৬ রোল নম্বরধারী ওই ছাত্রীর নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেওয়া। কারণ জানতে চাইলে মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ মো. আসাদ উল্লাহ বলেন, গত রমজানের পরে ভর্তি হওয়া এই ছাত্রীটি মেধাবী ছিল। সম্প্রতি অনেক দিন ধরে মাদ্রাসায় অনুপস্থিত। গত ১৩ তারিখও মাদ্রাসায় আসেনি। তাই ওইদিনই ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভর্তি বাতিল করে দিয়েছি। ঘটনাটি শুনেছি। আমরা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তবে ছাত্রীর মা বাবা দোয়া চেয়েছেন। ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলী মিয়া বলেন, ধর্ষিত মেয়েটির এই মাদ্রাসার ছাত্রী আমার জানা নেই। ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে আপনারা এখানে আসলেন কেন? ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ওই চুন্টার ৪ যুবক সম্পর্কে আমার ভাল জানা নেই। তবে প্রকৃত দোষীদের বিরূদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।

সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযুক্ত পাঁচ ধর্ষককে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। ধর্ষিতার মেডিকেল পরীক্ষার প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top