আট দিনের ব্যবধানে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে। আর দুর্বল হয়েছে দেশীয় মুদ্রা টাকা। ডলারের দাম আরও ৫০ পয়সা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, বৃহষ্পতিবার (২১ জুলাই) প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা, যা গতকাল পর্যন্ত ছিল ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণ করছে না। ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার লেনদেন করে, তার মধ্যে একটি দর বিবেচনায় নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সাকে বিবেচনায় নিয়েছে। এ দামেই ৭ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দেয়ার পর থেকে প্রতিনিয়তই ডলারের দাম বাড়ছে। তবে সেটা খুব সামান্য পরিমাণে। সব মিলিয়ে গত দুই মাসে ডলারের দাম বেড়েছে ৮ টাকার বেশি।
সরকারি আমদানি বিল মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর। এই দরে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ডলারের বিপরীতে টাকার হিসাব করে থাকে। এটাকে বলা হয় আন্তঃব্যাংক রেট। ডলারের দাম বাড়ায় একদিকে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে, আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ৯৪ টাকা ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করলেও ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে চার থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে। অনেক ব্যাংক বাড়তি দামেই প্রবাসী আয় সংগ্রহ করছে ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে। এতে আমদানিকারকদের ১০২থেকে ১০৩ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৩ টাকায়।
অস্থির ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত ডলারের দাম বাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের চাহিদা বেশি হওয়ায় ধীরে ধীরে দাম বাড়াচ্ছে। সেইসাথে রিজার্ভ থেকেও প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের ১৮ দিনে (১ থেকে ১৮ জুলাই) ৬৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়েছে ৬ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৯৩ টাকা ৯৫ পয়সা)। এর ফলে রিজার্ভ দুই বছর পর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। এভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডলারের বাজার।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ডলার নিয়ে দেশের মুদ্রাবাজারে এখন অস্থিরতা বিরাজ করছে। শিগগিরই এ সংকট কমার কোনো লক্ষণ নেই। এ সংকটের প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। ফলে রিজার্ভ এখন কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গেছে। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থায় নগদ টাকারও সংকট দেখা দিয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এতে চলতি হিসাবে লেনদেন ভারসাম্যেও বড় ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।