Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সরকার বন্যা মোকাবেলায় আরো প্রস্তুতি নিচ্ছে : ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সিলেট-সুনামগঞ্জের জন্য বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। সেখানে জলযান বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৪০০ জলযান বাড়িয়ে ডিপিপি প্রণয়ন করতে দিয়েছি। ৪০০ জলযান যদি আমরা প্রস্তুত করতে পারি এবং বন্যাকবলিত এলাকায় যদি দিতে পারি তাহলে এই সংকট আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব।

এরই মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬০টি উদ্ধারকারী জলযান প্রস্তুত করেছি। সেগুলো এবারের বন্যায় সহায়তা দিয়েছে। ’
আজ বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কালের কণ্ঠের কনফারেন্স রুমে দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি, ব্র্যাক ও কালের কণ্ঠের যৌথ আয়োজনে ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা শিক্ষণীয়, করণীয় ও পুনর্বাসন’ শীর্ষক এ আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কথাসাহিত্যিক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জলযানের সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়াতে পারলে বেশি মানুষ একসঙ্গে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারবে। বর্তমানে নির্মাণাধীন আশ্রয়কেন্দ্রগুলো আধুনিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি ভাবনায় রেখে বানানো হচ্ছে। সেখানে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে অতিরিক্ত টয়লেটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। আমাদের ধারণা, একটা আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০০ মানুষ থাকবে কিন্তু সেখানে দুই-তিন হাজার মানুষ আশ্রয় নেন। ’

এনামুর রহমান আরো বলেন, ‘ফ্লাস সেন্টার, মুজিব কেল্লা, সাইক্লোন সেন্টার আরো নির্মাণাধীন আছে। এগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে দুর্যোগপূর্ণ সময়ে আরো ভালো ব্যবস্থা নিতে পারব। আমরা সিলেটের বন্যা থেকে বেশি শিক্ষা নিয়েছি। আমরা আরো এক হাজার মুজিব কেল্লা এবং এক হাজার ফ্লাস সেন্টার নতুন করে করব। এগুলোর ডিপিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে বন্যা মোকাবেলায় নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। আর ডেল্টা পরিকল্পনায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় যেসব কার্যক্রম হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ’

সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম (অব.) বলেন, ‘বাঙালি জাতি হিসেবে বিপদে আমরা একে অন্যের পাশে দাঁড়াই। আমরা সামর্থ্য কম থাকলে সমস্যাও কম। শত বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা সিলেটে হয়েছে, পত্রিকায় জেনেছি। হাওরে যে সড়কটি হয়েছে, এটি বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই-বাছাই হয়েছে কি না সেটা আমি জানি না। এখন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন হাওরে আর রাস্তা হবে না, উড়াল সড়ক করে দেওয়া হবে। মানুষ করে করেই শেখে। উন্নত দেশগুলোও ধাপে ধাপে তাদের প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘এমন বন্যা ১০০-২০০ বছর পর হবে, এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখা আমাদের পক্ষে সম্ভব কি না? এটা আমাদের চিন্তা করে দেখতে হবে। তাহলে প্রযুক্তিটাও আমাদের স্থানীয়ভাবে হতে হবে। আমাদের সরকার দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য এবং বন্যা মোকাবেলা করার জন্য সামর্থ্য রাখে। ফরাসি দার্শনিক বলেছিলেন, সাধারণ মানুষ হলো অসাধারণ। আমাদের সাধারণ মানুষকে কাজে লাগাতে হবে। ’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগম বলেন, ‘এবারের বন্যায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করেছি। প্রতিটি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের মন্ত্রণালয়ে জরুরি সেবাদান কেন্দ্র আছে। সারা দেশের সঙ্গে আমরা ২৪ ঘণ্টাই যোগাযোগ রাখি । যেখানে যে ধরনের দুর্যোগ হোক, আমরা সেভাবে মোকাবেলা করতে সারাক্ষণ কাজ করছি। ’

তিনি বলেন, ‘এবারের যে আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা, আমাদের কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিল না। তার পরও এত কম ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে টিকে আছি, এটা কিন্তু আমাদের অন্য রকম এক শক্তি। আশা করি ভবিষ্যতেও যেকোনো দুর্যোগ-বন্যা খুব সহজে মোকাবেলা করতে পারব। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ’

ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক সাজেদুল হাসান বলেন, ‘আমি ৩০/৩৫ বছর ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু এবারের বন্যাটা ছিল অস্বাভাবিক। হওরে বন্যা হয়। কিন্তু এবারের বন্যাটা ছিল অপ্রত্যাশিত। এই ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায় থেকে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও আক্রান্ত মানুষের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব রেখে গেছে তা পুনরুদ্ধার ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যাপক সহায়তা প্রয়োজন। বন্যার প্রথম দিন থেকেই বন্যার্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক। ’

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া বলেন, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করে পানিপ্রবাহ যেন ভালোভাবে হয় সেদিকে নজর দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।

তিনি বলেন, যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না, বন্যায় তাদের জীবনের যে সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে, তারা কিভাবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে সেটা দেখতে হবে।

গোলটেবিল আলোচনায় আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান, ব্র্যাকের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির প্রধান খন্দোকার গোলাম তৌহিদ, জিআইজেডের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার ফারহানা রব সাথী, ব্র্যাকের জেন্ডার মেইনস্ট্রিমিং, জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভার্সিটি কর্মসূচির লিড মাহবুবুল আলম, একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক নাজনীন মুন্নি ও সুনামগঞ্জ সদরের সুরমা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মাজেদা আক্তার।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top