Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

আগে চীন থেকেই আসবে ঋণ পরিশোধের চাপ : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

বাংলাদেশের মেগাপ্রকল্পগুলোর বেশির ভাগই বাস্তবায়িত হচ্ছে বৈদেশিক ঋণে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের যে হার তাতে প্রকল্পগুলো ২০৩০ সালেও সম্পন্ন হবে না। তবে ঋণের পরিশোধের চাপ ২০২৪ সাল থেকে শুরু হবে বলে মনে করছেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণের রেয়াতকালের (গ্রেস পিরিয়ড) দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে চীন তারপর জাপান, রাশিয়া।

তাই ঋণ পরিশোধের চাপটা আগে চীন থেকেই আসবে। আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন থেকে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিলে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও আসতে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘বাংলাদেশের বৃহৎ বিশটি মেগাপ্রকল্প : প্রবণতা ও পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল মিডিয়া ব্রিফিংয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডির) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেগাপ্রকল্পের মূল অংশীদার পরিবহন খাত। বাংলাদেশে চলমান ২০টি মেগাপ্রকল্পের মধ্যে ১১টি পরিবহন খাতের। মেগাপ্রকল্পের মোট ব্যয় খরচ ৭০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৪৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ।

তিনি আরো বলেন, তবে আশায় কথা যে বাংলাদেশের ২০টি মেগাপ্রকল্পের বৈদেশিক অর্থায়ন সাশ্রয়ীভাবে হয়েছে। এটা বড় সন্তোষের জায়গা। এসব প্রকল্পে ৪৫টি ঋণ প্যাকেজের মধ্যে পাঁচটি অনুদান। ৩৩টি সাশ্রয়ী ঋণ প্যাকেজ, আধাসাশ্রয়ী দুটি ও বাণিজ্যিকভাবে নিতে হয়েছে পাঁচটি ঋণ প্যাকেজ, যা চীন থেকে এসেছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি দায়দেনা পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ২০২৬ সাল নাগাদ তা দ্বিগুণ হতে পারে। এই হার ২ শতাংশের পৌঁছনোর আশঙ্কা রয়েছে। তখন বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আসলে নির্ভর করবে ওই সময়ে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি কেমন থাকে, অর্থনীতি কতটা সুসংহত থাকে, তার ওপর। দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরো বলেন, বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন ও জাপানকেই বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তার মধ্যে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেশ কম।

তিনি আরো বলেন, বৈদেশিক দায়দেনা ১৭ শতাংশে নিচে ও অভ্যন্তরীণ দায়দেনা ১৭ শতাংশের ওপরে। লক্ষ্যণীয় হলো এটা আস্তে আস্তে বাড়ছে। ২০১৮ সালের পর দায়দেনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আর মেগাপ্রকল্পের ঋণের পরিশোধের সবচেয়ে বড় অংশ ৩৬.৬ শতাংশ যাবে রাশিয়ার কাছে, এরপর জাপানে যাবে ৩৫ শতাংশ এবং চীনের কাছে প্রায় ২১ শতাংশ। যদিও পরিমাণের হিসেবে চীন তৃতীয় হলেও দায়দেনা পরিশোধের সময়সূচি, তাতে সবচেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে চীনকে। বিরাট ধাক্কা সামলাতে কর আহরণ বাড়াতে হবে। কারণ কর জিডিপির পরিমাণ এখনো ১০-এর নিচে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘২০২৮ সালের মধ্যে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সবগুলো প্রকল্পের কাজ বাকি থাকবে। ২০টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি প্রকল্প ব্যয় সময় সময় বাড়ানো হয়েছে। আমি মনে করি, ২০২৪ ও ২০২৬ সালে দায়দেনা পরিশোধে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সাহায্য চাওয়াটা ইতিবাচক। ‘

তিনি আরো বলেন, ‘সরকার আইএমএফর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে, এটাই শুভকর ছিল। আইএমএফর কাছে শুধু টাকার জন্য যেকোনো দেশ যায় না, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যে পিছুটানমূলক বক্তব্য এসেছে তা উৎসাহব্যঞ্জক নয়। দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার হোক আর সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার হোক, আইএমএফের কাছে অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এর ফলে মধ্য মেয়াদে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীরা একধরনের আস্থা পাবেন। শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা বলে, তারা যখন আইএমএফের কাছে গেছে তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ‘

এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বড় উদ্বেগের বিষয় সরকার ঋণের ৫০ শতাংশ নিয়েছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। সেটা পরিশোধ না করলে ব্যাংকগুলো তারল্য পাবে না। অন্যদিকে যেসব প্রকল্প শুরু হয়নি, অতি জরুরি না হলে তা স্থগিত করা প্রয়োজন। আর যেসব এগিয়ে চলেছে, কিন্তু ব্যয় কাঠামোর স্বচ্ছতা নেই, প্রকাশ্যভাবে দুর্নীতি কিংবা অতিমূল্যায়িত হয়েছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। আর যেগুলো বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে সেগুলোর দায়দেনার সময় কাঠামোকে পুনঃতফসিলীকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। ‘

জ্বালানি তেল প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা একটা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের পক্ষে সাশ্রয়ী মূল্যে তেল পাওয়ার বিকল্প ব্যবস্থা নেই। তবে আমাদের ফসিল ফুয়েল থেকে বের হয়ে সবুজ জ্বালানির দিকে অগ্রসর হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকার কিছু নীতিকাঠামো করেছে। কিছু জাতীয় কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সেসব পরিকল্পনাকে মধ্য মেয়াদে এনে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ‘ তিনি আরো বলেন, ‘ফিসক্যাল পলিসি, মনিটরি পলিসি, বাণিজ্য নীতি, এর সাথে অন্যান্য যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় রয়েছে সেগুলোকে সমন্বয়ের মধ্যে রাখতে হবে। বিচ্ছিন্নভাবে আলাদাভাবে এগুলো দেখলে হবে না। এসব নীতি দেওয়ার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের। তারাই এ বিষয়গুলো দেখবে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top