আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তথাকথিত আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে তাদেরকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এই বিবৃতি প্রদান করেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
বিএনপি যদি তথাকথিত আন্দোলনের নামে এদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং আবারও ২০১৩-১৪-১৫ ও ২০১৮ সালের মতো অগ্নিসন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে চায়, তাহলে তাদেরকে ভয়াবহ পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে। জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, পবিত্র সংবিধান হলো দেশের অস্তিত্ব, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষা কবচ। সংবিধান অনুযায়ীই এদেশের সকল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সংবিধানসম্মতভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে এবং যথা সময়েই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ চিরাচরিতভাবে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে লাগাতার মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের পর তারা এখন অতীতের মতো নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করছে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছেন, অথচ বিএনপিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এবং পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে বিএনপি বার বার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বুঝতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুটি এখন একটি ডেড ইস্যু এবং পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ চ্যাপ্টার। জল বহু দূর গড়িয়ে গেছে। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সেই একই জায়গায় হাবুডুবু খেতে থাকলে বিএনপিকে গভীর জলে ডুবে মরতে হবে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের নৌকা বহুদূর এগিয়ে গেছে। তাতে উঠতে হলে অনেকটা পথ সাঁতরে পাড়ি দিতে হবে। এখনও সময় আছে, বিএনপিকে সংবিধান ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঠিক ধারায় পথ চলার।
কাদের বলেন, দেশবাসী ভুলে যায়নি, ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে বিএনপি জাতির সাথে প্রতারণা করেছে এবং তিন জোটের রূপরেখাকে পদদলিত করে নতুন পোশাকে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটায়। মিরপুর, মাগুরা ও বগুড়াসহ জাতীয় সংসদের কয়েকটি আসনের উপ নির্বাচন এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি তখন ভোট ডাকাতির ভয়াবহ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
তিনি বলেন, বিএনপির স্বৈরচারী নীতির ফলে দেশবাসীর মনে সৃষ্টি হয় গভীর শঙ্কার। দেশবাসী নির্বাচনের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়ে। তখন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান। বিএনপিকে পঞ্চম সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে সংবিধান সংশোধনের বিল উত্থাপনের দাবি জানানো হলে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, নিরপেক্ষ কে? পাগল আর শিশু ছাড়া নাকী কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না! যদি প্রশ্ন করি তাহলে এখন কেন পাগল (তাদের ভাষায়) আর শিশুদের প্রতি আস্থা রাখতে চান? তাহলে কি জবাব দেবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতারা এখন তত্ত্বাবধায়কের কথা বলছে অথচ বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করেছিল। তখন বিরোধী দল ও দেশের সর্বস্তরের মানুষ ওই নির্বাচন বর্জন করে। তারপরও বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক-রশিদদের দল ফ্রিডম পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করেছিল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আর বিএনপি ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বার বার বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখন তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য মায়া কান্না করে।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই দেশের পবিত্র সংবিধান ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও পবিত্র সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই।