রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই গণমানুষের নেতা। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও তিনি অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তাঁর নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার পথে।
আগামীকাল ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আজ সোমবার এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিনে তাঁকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর দেশের এক ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারে শেখ হাসিনার জন্ম। শৈশব থেকেই তিনি দেখেছেন তাঁর পিতা বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব, সংগ্রামী জীবন এবং দেশ ও গণমানুষের রাজনীতি। যুক্ত হয়েছেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনসহ বাঙালির অধিকার আদায়ের সব লড়াই-সংগ্রামে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তাঁর চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। শহীদ হন মা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ অনেক আপনজন। শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
তিনি বলেন, মা, বাবা, ভাইসহ আপনজনদের হারানোর বেদনা বুকে ধারণ করে তাদের পরবর্তী ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে চরম প্রতিকূল পরিবেশে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলাসহ বহুবার তাঁর ওপর হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতই প্রতিবার তাঁকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।
আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৮১ সালে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ’৯০-এর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন হয়। বিজয় হয় গণতন্ত্রের।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। এ সময় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি এবং প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায় আসে। এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকরসহ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু ও রায়ের বাস্তবায়ন, সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত স্থল সীমানা নির্ধারণ তথা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদিত হয়।
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রো রেলসহ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলা, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এবং দেশের জন্য বয়ে এনেছেন বিরল সম্মান। দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে তিনি ‘রূপকল্প-২০২১’-এর সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় ‘ভিশন-২০৪১’ কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ ব-দ্বীব মহাপরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান ২১০০) গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি গোটা বিশ্বকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। মহামারি করোনার প্রভাবে গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত ও সাহসী পদক্ষেপের ফলে সরকার করোনার প্রভাব মোকাবেলা করে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখতে সরকার প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন প্রদানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার কার্যক্রম চলছে। করোনা মহামারির সফল মোকাবেলা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ও জীবনমান সচল রাখার ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ প্রণীত ‘কভিড-১৯ সহনশীল র্যাংকিং’-এ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং বিশ্বে ২০তম স্থান অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব, সঠিক সিদ্ধান্ত ও অদম্য সাহসিকতায় বাংলাদেশ করোনা পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘জাতি হিসেবে আমরা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত অতিক্রম করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সোপান বেয়ে আমরা পৌঁছে গিয়েছি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর স্বর্ণতোরণে। করোনার অব্যাহত চোখ রাঙানিকে অগ্রাহ্য করে জাতি সাড়ম্বরে উদযাপন করছে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। আমরা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাগ্যবান। জাতির পিতা আমৃত্যু যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখে গেছেন, তাঁর কন্যার সুদক্ষ হাতেই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপায়ণ স্বচক্ষে দেখে যাওয়ার এবং তার অংশীদার হওয়ার বিরল সুযোগ আমরা পেয়েছি।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু, সুখ-সমৃদ্ধি ও অব্যাহত কল্যাণ কামনা করেন।