নিজেদের ‘হোম অব ক্রিকেটে’ ঘূর্ণি উইকেট বানিয়ে বড় বড় দলকে নাকাল করা নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে আজ নিজেদের ফাঁদে নিজেদেরকেই পড়তে হলো। মিরপুরে ঘূর্ণিঝড় তুললেন কিউই স্পিনাররা। তাদের কাছে একে একে উইকেট বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত করলেন। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স দেখার পর আজকেই সিরিজ নিশ্চিত করাটা অস্বাভাবিক ছিল না। কিন্তু মাঠের খেলায় বাংলাদেশকে ৫২ রানে হারিয়ে সিরিজ ২-১ করে ফেলল নিউজিল্যান্ড।
রান তাড়ায় নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র ৩২ রানের মধ্যে ফিরে যান টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যান। শুরুটা কিন্তু মন্দ ছিল না। লিটন-নাঈম ২৩ রান তুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু কোল ম্যাকনকির করা তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বল থেকে বিপর্যয়ের শুরু। এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরেন ১১ বলে ৩ চার ১৫ রান করা লিটন দাস। পরের ওভারে তিনে নামা মেহেদি হাসানকে (১) তুলে নেন আজাজ প্যাটেল। দুই বল পরেই এই স্পিনারের বলে ম্যাকনকির তালুবন্দি হন সাকিব আল হাসান (০)। নাঈমের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। ৭ম ওভারের শেষ বলে ১৯ বলে ১৩ করা নাঈমকে বোল্ড করে দেন রাচিন রবীন্দ্র। এরপর আবার আজাজ প্যাটেল। দলীয় ৪৩ রানে শততম টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা বাংলাদেশ অধিনায়ককে (৩) নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন এই স্পিনার।
আজাজের পরের বলে বোল্ড হয়ে ‘গোল্ডেন ডাক’ মারেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে সোহানের সৌজন্যে আজাজের হ্যাটট্রিক হয়নি। দলকে এগিয়ে নেওয়ার ভার পড়ে মুশফিকুর রহিম আর নুরুল হাসান সোহানের ওপর। কিন্তু সেটা আর হলো কই? দলীয় ৫৭ রানে ম্যাকনকির বলে ব্লান্ডেলের তালুবন্দি হন সোহান (৮)। ফিরতি ওভারে এসে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে (০) এলবিডাব্লিউ করেন ম্যাকনকি। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি সাইফ। বাংলাদেশের পরাজয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। নাসুম আহমেদকে (১) বোল্ড করেন স্কট কুগেলাইন। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের করা শেষ ওভারের চতুর্থ বলে মুস্তাফিজুর রহমান (৪) ক্যাচ দিলে বাংলাদেশ ৭৬ রানে প্যাকেট হয়। নিউজিল্যান্ড জয় পায় ৫২ রানে। ১৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন আজাজ প্যাটেল। এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো দলের সেরা বোলিং। আরেক অফস্পিনার কোল ম্যাকনকি ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট।
এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১২৮ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। তাদের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। করোনা নেগেটিভ হয়ে দলে ফেরা ওপেনার ফিন অ্যালেন শুরু থেকেই মারমুখী মেজাজে অবতীর্ণ হন। বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ শুরু করেন দুই স্পিনার মেহেদি হাসান এবং নাসুম আহমেদকে দিয়ে। প্রথম ওভারেই মেহেদিকে দুই বাউন্ডারিতে ১১ রান তুলে নেন অ্যালেন। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসেই ১০ বলে ৩ চারে ১৫ রান করা বিপজ্জনক এই ব্যাটসম্যানকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। মিড-অনে ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
কিউইদের রান তোলার গতিও কমে আসে। এরপর জোড়া আঘাত হানেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। এই পেসারের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন ২০ বলে ৩ চারে ২০ রান করা উইল ইয়ং। রিভিউ নিয়েও সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ওই ওভারের শেষ বলে আবারও এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন অভিজ্ঞ কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (০)। আবারও রিভিউ নেয় নিউজিল্যান্ড। কিন্তু আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই সঠিক প্রমাণিত হয়। ১০ম ওভারের তৃতীয় বলে আঘাত হানেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ক্লিন বোল্ড হয়ে ফিরে যান ২০ বলে ২০ রান করা ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র।
দলীয় ৬২ রানে কিউইদের ইনিংসের অর্ধেক শেষ হয়ে যায় অধিনায়ক ল্যাথামের (৫) আউটে। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে কিউই ক্যাপ্টেনকে কট অ্যান্ড বোল্ড করেন মেহেদি হাসান। উইকেটে টিকে থাকার লড়াই শুরু করেন হেনরি নিকোলাস এবং টম ব্লান্ডেল। এই দুজনের ব্যাটেই কিউইদের স্কোর তিন অংক স্পর্শ করে। মুস্তাফিজের করা শেষ ওভারে আসে ২টি বাউন্ডারিসহ ১১ রান। পঞ্চম বলে নিকোলাসের বিপক্ষে লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন নাকচ করেন আম্পায়ার। বাংলাদেশ রিভিউ নিলেও সফল হয়নি। প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটা দেওয়া নিকোলাসকে ফিরিয়ে আনেন আম্পায়ার। নিকোলাস ২৯ বলে ৩ চারে ৩৬* আর ব্লান্ডেল ৩০ বলে ৩ চারে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন। নির্ধারিত ২০ ওভারে কিউইদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১২৮ রান । ২৮ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন সাইফউদ্দিন। ১টি করে নিয়েছেন মেহেদি, মুস্তাফিজ আর মাহমুদউল্লাহ।
বাংলাদেশ দল : মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, নাসুম আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ড দল : ফিন অ্যালেন, রাচিন রবীন্দ্র, টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), উইল ইয়াং, টম ব্লান্ডেল, হেনরি নিকোলস, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, কোল ম্যাকনকি, এজাজ প্যাটেল, জ্যাকব ডাফি, স্কট কুগেলাইন।