রাত যত গভীর হয় ট্রাকের লাইন তত লম্বা হতে থাকে ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পাড়ঘেঁষা ধলার মোড়, মদনখালী ও সিএন্ডবি ঘাট এলাকায়। একের পর এক লাইট জ্বালিয়ে এ সময় মাথা উঁচু করে পদ্মা নদীর গভীরে যাওয়া-আসা করে ট্রাকের লম্বা বহর। নদীর বুকে তখন আট থেকে ১০টি ভেকু দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলে। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভেকুগুলো একের পর এক ট্রাকে বালু ভরছে।
খালেক নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমরা এখানে আর বসবাস করতে পারছি না। ট্রাকগুলো যে হারে রাতভর বালু নেয়, এর শব্দ আর ধুলাবালিতে বাস করাই কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।’
জলিল নামের এক ব্যক্তি জানান, এলাকার প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি এসব কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না। আমরা নিজেরাও খুব ভয় পাই।’
বাবন নামের একজন বলেন, ‘এক একটি ভেকু রাত ভরে বালু কাটবে, আর ওই দায়িত্ব যিনি নেবেন, তাঁকে ভোররাতে ভেকুপ্রতি ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা শুনেছি।’ সব খরচ বাদেই তিনি ওই টাকা পান বলে দাবি করেন বাবন।
এদিকে উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে ওই এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) অতুল সরকারের নির্দেশনায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল আমিন। এ সময় তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ঘটনাস্থলে চালকসহ একটি ট্রাক আটক এবং দুটি ভেকু বিনষ্ট করেন। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে এ সময় দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায়।
ইউএনও মো. মাসুম রেজা বলেন, ‘স্থানীয় সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পদ্মা নদীর ভেতরে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করি। এ সময় চালকসহ একটি ট্রাক আটক এবং দুটি ভেকু বিনষ্ট করা হয়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজুর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, আনসারের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে অভিযানে সহযোগিতা করে।
স্থানীয়রা মনে করেন, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে পদ্মার বুক থেকে বালু কাটার যে মহোৎসব, এগুলো অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত। নাহলে পদ্মার তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনে দিশেহারা হতে হবে বাসিন্দাদের।