রাজধানী ঢাকার মতো মশার যন্ত্রণায় নাকাল যশোরবাসীও। এক্ষেত্রে কোনও প্রতিরোধ ব্যবস্থাই যেন কাজে আসছে না। দিনের আলো নিভে এলেই ছোট্ট এই কীট মানুষের রক্ত শোষণ করতে ঘরের মধ্যে দল বেঁধে ঢুকে পরছে। সন্ধ্যায় মশার কয়েল জ্বলে না শহরে এমন বাড়ি খুঁজে পাওয়া এখন দুষ্কর। যন্ত্রণাদায়ক এ পরিস্থিতি অবসানে শহরবাসী তাকিয়ে এখন আছে পৌর কর্তৃপক্ষের দিকে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ দেশে শীতের তীব্রতা কমতে শুরু করে। এরপর বাড়তে শুরু করেছে মশার উৎপাত। গত একমাসে যা যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। শহরের এমন কোনও বাড়ি নেই যেখানে মশার উপদ্রব নেই। বর্তমানে গোটা পৌরবাসী মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, শহরের এমন কোন বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে সন্ধ্যার পর মশার কয়েল জ্বলে না। নানা ব্রান্ডের মশার কয়েল জ্বালিয়েও মানুষ নিস্তার পাচ্ছে না। মশার আক্রমণে নিরুপায় হয়ে পড়ছে মানুষ। কামড়ে শরীরে জ্বালা ধরছে। এ জ্বালা থেকে রেহাই পেতে বাড়িতে বাড়িতে অ্যারোসল ও মশা মারার র্যাকেট হাতে নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় রীতিমতো মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামছে শিশুরা।
এদিকে এই সুযোগে দুইহাতে ব্যবসার ফায়দা লুটে নিচ্ছে মশার কয়েল কোম্পানিগুলো। তারা দ্বিগুণ, তিনগুণ দামে মশার কয়েল বিক্রি করছে। আর গিনিপিগের মতো মানুষকে বাধ্য হয়েই এসব কয়েল ও অন্যান্য প্রতিরোধ সামগ্রী কিনতে হচ্ছে।
যশোর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ মে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ মশক নিধন অভিযান চালিয়েছিল। শহরের পৌরপার্কে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। মাসব্যাপী এ কার্যক্রম চলে ৪ জুন পর্যন্ত। সে সময়ে পৌরসভার কয়েকটি টিম গোটা শহরে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে ফগারমেশিন, হ্যান্ড স্প্রে ও পাওয়ার মেশিন ব্যবহৃত হয়। আর মশানাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয় আকিক নামে একটি কীটনাশক। যা চীনের তৈরি ও সেতু পেস্ট্রিসাইড কোম্পানির আমদানিকৃত। প্রতি ৫০০ এমএলএর মূল্য এক হাজার ২০৬ টাকা। এ মশানাশক শহরের ৯টি ওয়ার্ডসহ অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান চত্বরে ও হাট-বাজারে স্প্রে করা হয়। মশা নিধনে কার্যকরী আকিক কীটনাশক ১০ লিটার পানিতে ১০০ মিলি লিটার মিশিয়ে স্প্রে করা হয়েছে। যার ফলে কিছুটা সুফল পায় শহরবাসী।
গত প্রায় এক বছর পর মশক নিধন অভিযান শুরু করেছেন পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ অভিযানে তাদের মশক নিধনে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১০ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, ওই মশক নিধন অভিযানে পৌরসভার কয়েকটি টিম শ্রমিক নিয়ে মাঠে নামে। ফগার, স্প্রে ও পাওয়ার মেশিন চালাতে গিয়ে প্রতিদিন ৫০ লিটার ডিজেল, ৮ লিটার অকটেন ও কীটনাশক ব্যয় হয়েছে। এ হিসেবে এক মাসের অভিযানে মোট ব্যয় হয়েছে প্রায় দশ লাখ টাকা। এরমধ্যে দৈনিক শ্রমিক মজুরিসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ৪ লাখ ৩২ হাজার টাকা, তিন হাজার ২৫০ লিটার ডিজেল কিনতে ব্যয় হয় ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা, ২৪০ লিটার অকটেন কেনায় ব্যয় ২১ হাজার ৩৬০ টাকা ও বাকি চার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়েছে কীটনাশক কেনায়।
এরপর গত প্রায় এক বছর পর ১৪ মার্চ থেকে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ফের মশক নিধন অভিযান শুরু করেছে। কিন্তু এ অভিযান এখনও মানুষের মাঝে দৃশ্যমান হয়নি। কর্তৃপক্ষ বলছেন, ৯টি ওয়ার্ড জুড়েই এ অভিযান পরিচালিত হবে। প্রথম দফায় ১৫ দিন, এরপর ৭ দিন বন্ধ রেখে ফের ১৫ দিন এ অভিযান পরিচালিত হবে। মশার যন্ত্রণায় ঘুম হারাম হওয়া মানুষ এখন তাকিয়ে আছে পৌরসভার অভিযানের দিকে।
এ বিষয়ে পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন বলেন, গত বছরের ৪ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মাসব্যাপী মশক নিধন অভিযান শহরময় পরিচালিত হয়েছিল। এতে পৌরসভার কয়েকটি টিম কাজ করেছিল ও বিপুল অংকের টাকা ব্যয় হয়েছিল। এ কাজে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে চীনের আকিক কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছিল। যার ফল আমরা পেয়েছিলাম। মশা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এ বছরও পৌর মেয়রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ মার্চ থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু করা হয়েছে। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত এ অভিযান চলবে, অবশ্য মাঝে ৭ দিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, যশোর পৌরসভার নাগরিক সেবাসহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। মশক নিধন অভিযানও এর বাইরে নয়। পৌরসভার নাগরিকদের সমস্যা অনুধাবন করতে পেরে ১৪ মার্চ থেকে এ অভিযান শুরু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই পৌর নাগরিকরা মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবেন বলে তিনি আশা করছি।