Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ ব্রেইল সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পরে বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম সব জায়গা থেকে মুছে ফেলা হয়েছিল। এই বই প্রকাশ হবার পর সেই ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে কিছুটা হলেও আমরা রক্ষা পেয়েছি। গতকাল মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকের আগে এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মোড়ক উন্মোচন করেন। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে এবং মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ বাংলাদেশ সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে যেমন তার জীবনগাঁথা আছে পাশাপাশি তার সংগ্রামেরও অনেক কথা আছে। আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক তথ্য এখানে পাওয়া যায়।

সারাবিশ্বে বইটি ইতিমধ্যে ১৪টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং আরো কয়েকটি ভাষায় অনুবাদ করার জন্য আমাদের কাছে অনুমতি চেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে যারাই এটা পড়েছে তাদের কাছেই এটা অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তিনি বলেন, জাতির পিতার জীবনী এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের আত্মপরিচয় এবং আজকে যে স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, সেই ইতিহাস জানার এখানে সুযোগ রয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপনের এই সময়ে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থের ৬ খণ্ড ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনী। ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু এটি লেখা শুরু করেছিলেন। ২০১২ সালের ১২ই জুন বইটি প্রকাশিত হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পাঠকদের কথা বিবেচনা করে ‘মুজিববর্ষ’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটির ব্রেইল সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং প্রথম ধাপে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ১০০ সেট (প্রতিটি ৬ খণ্ড) ব্রেইল সংস্করণ মুদ্রণ সম্পন্ন হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ দুটি বইয়ের নামকরণই জাতির পিতার ছোট কন্যা শেখ রেহানার করা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বছরের শুরুতে বিনামূল্যে যে পাঠ্য পুস্তক বিতরণ করা হয় সেগুলোও দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজকে এই ব্রেইল বই প্রকাশ করার ফলে, আমি মনে করবো, আমাদের সমাজের একটা মূল্যবান গোষ্ঠী, তারাও ইতিহাসটা জানার সুযোগ পাবে। আর এরমধ্য দিয়ে তারাও যে আমাদেরই একজন সেটাও কিন্তু প্রমাণিত হলো। মোট ৬ খণ্ড ব্রেইলে প্রকাশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি এগুলো লাইব্রেরিতে সংগ্রহের পরামর্শ দেন। কেননা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সংগ্রহ করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য এগুলো পড়াটা একটু কষ্টসাধ্য হবে বলেও তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রয়াত বান্ধবী সাংবাদিক বেবী মওদুদকে নিয়ে জাতির পিতার ডায়েরিগুলো সংগ্রহ এবং একে পরিপূর্ণ বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেন উল্লেখ করে বলেন, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টগুলো নিয়ে ইতিমধ্যে বই প্রকাশ করেছি (সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দি নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)। যার ৬ খণ্ড ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং ৭ম ও ৮ম খণ্ড (মোট ১৪ খণ্ডের মধ্যে) প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। এর মাধ্যমেও কিন্তু আমাদের দেশের সংগ্রামের ইতিহাস, বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামের ইতিহাসটা বের হয়ে এসেছে এবং আমরা কীভাবে স্বাধীনতা অর্জন করেছি সেটা ধীরে ধীরে প্রকাশ পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কারাগারে বসে লেখা অপর আত্মজীবনী ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিষয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দেয়ার পর তাকে যখন গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয় সে সময় তিনি এই ডায়েরিটা লেখেন। আর ১৯৫২ সালে একটি শান্তি সম্মেলন উপলক্ষে চীন ভ্রমণ নিয়ে জাতির পিতা লেখেন ‘আমার দেখা নয়া চীন’। ১৯৫৪ সালে তিনি যখন গ্রেপ্তার ছিলেন তখন এই লেখাটা লিখেছিলেন। জাতির পিতার এসব ব্যক্তিগত ডায়েরি যা পরবর্তীতে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো প্রত্যেকটি খাতার ওপরই জেলখানার সেন্সরশিপের সিল এবং সই রয়েছে। সময়গুলোও সেখান থেকে খোঁজ করে বের করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার মা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন তিনি যেন তার (বঙ্গবন্ধু) জীবনীটা লিখে রাখেন। সেই থেকে তিনি কিন্তু লিখতে শুরু করেন। বাবা যতবার কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন আমার মা জেলগেটে থেকে বাবার লেখার খাতাগুলো সংগ্রহ করে রাখতেন। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের ইতিহাস প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো ১৯৭১ সালে এই খাতাগুলো আমরা প্রায় হারাতে বসেছিলাম। আমাদের ধানমণ্ডির বাসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী লুটপাট করে। যদিও সবকিছু লুটপাট করে, তবে এগুলো লাইন টানা রুল করা কিছু খাতা ছিল বিধায় সেগুলো তাদের নজরে পড়েনি বা তাদের কাছে এগুলোর কোনো মূল্য ছিল না। যাই হোক এক সময় সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে আসি। যা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ভূমিকাতে আমি লিখেছি। তিনি বলেন, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তাদের ধানমণ্ডির বাসায় আবার লুটপাট হয়। ’৮৬ সালে (আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর) দেশে ফিরে আসার পর জিয়াউর রহমান সে বাসায় তাকে ঢুকতে দেয়নি বরং সে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে তাদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেছিল। পরে যখন সে বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয় তখনই তিনি খাতাগুলো সেখান থেকে এবং ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় তার (শেখ হাসিনা) বেঁচে যাওয়ার পর এক ফুপাতো ভাইসহ আরো কয়েকজনের সহায়তায় বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, খাতাগুলোর জীর্ণশীর্ণ দশা ছিল। ফটোকপি করে, স্ক্যান করে ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে অনেক কষ্ট করে সেগুলোর পাঠোদ্ধার করতে হয়েছে। জেনারেল জিয়ার আদলে খালেদা জিয়ার ইতিহাস বিকৃতির পদক্ষেপ সম্পর্কে শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ার পর্যন্ত সরিয়ে দেয়। শেখ হাসিনা ভাষণে তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। মুজিববর্ষে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top