নিজের স্ত্রী ও শিশুসন্তানের ভরণপোষণের কোনো দায়িত্বই পালন করতেন না কক্সবাজারের চকরিয়া পৌরসভার বাটাখালী ফুলতলা গ্রামের মাদকাসক্ত রেজাউল করিম। উল্টো মাদকের টাকা জোগাড় করতে প্রায়ই নির্যাতন করতেন স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে। অথচ নিজের ও সন্তানের আহার জোটাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করেন রাবেয়া। আর মাদকের টাকা জোগাড় করতে রেজাউল শেষ পর্যন্ত নিজের দেড় বছরের কন্যাসন্তান জান্নাতুল মেহেরাজকেই বিক্রি করে দেন স্ত্রীর অগোচরে। কোলের সন্তানকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকেন রাবেয়া। এক সপ্তাহ পর লোকমুখে জানতে পেরে রাবেয়া পুলিশকে জানান বিষয়টি। পুলিশ প্রথমে রেজাউলকে আটক করে ইয়াবা বড়িসহ। শেষে গতকাল শুক্রবার সকালে মহেশখালী উপজেলার একটি গ্রাম থেকে শিশু মেহেরাজকে উদ্ধার করা হয়েছে।
রাবেয়া গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাপের বাড়ি পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাজারপাড়ায়। আট দিন আগে আমি অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করতে গেলে অজান্তে কোলের শিশু জান্নাতুল মেহেরাজকে চুরি করে নিয়ে যায় মাদকাসক্ত স্বামী রেজাউল। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাচ্ছিলাম না বুকের ধনকে। হঠাৎ বৃহস্পতিবার বিকেলে স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পাই শিশুটিকে মহেশখালীর শাপলাপুরের বারিয়াপাড়ায় এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। রেজাউল ওই ব্যক্তিকে জানিয়েছিল, সে চলার পথে শিশুটিকে কুড়িয়ে পায়। তার কথা বিশ্বাস করে ওই ব্যক্তি শিশুটিকে হেফাজতে নেন, বিনিময়ে রেজাউলকে হাজারখানেক টাকা দেন। ওই টাকা দিয়ে ইয়াবা কিনে সেবন করছে রেজাউল। তখন স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে গিয়ে বিস্তারিত জানাই। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে রেজাউলকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে। আট দিন পর আজ (শুক্রবার) সকালে পুলিশের সহায়তায় কোলের শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।’
চকরিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. বশিরুল আইয়ুব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নিজের সন্তানকে কোনো বাবার এভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। বিষয়টি জানার পর তাত্ক্ষণিক শিশুটিকে উদ্ধার এবং মাদকাসক্ত রেজাউলকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশকে সহায়তা দিই। এ সময় বেশ কিছু ইয়াবা ট্যাবলেটও রেজাউলের কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।’
চকরিয়া থানার এসআই গাজী মঈন উদ্দিন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর প্রথমে রেজাউলকে আটক করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে পাওয়া যায় ৩৩ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট।’
থানার ওসি মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকাসক্ত রেজাউলের নিজের সন্তান চুরি করে বিক্রির ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় রেজাউলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে।’