বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা আখ্যায়িত করে তাদের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রসঙ্গ টেনে ব্যক্তিস্বার্থে নয়, দেশের জন্য কাজ করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তি স্বার্থে যে রাজনীতি, সে রাজনীতি কখনো জনগণ ও দেশকে কিছু দিতে পারে না। ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না। তাই বিএনপির প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনীতি যদি হয় জনস্বার্থে, জনগণের কল্যাণে, জনগণের মঙ্গলে, তাহলে দেশকে কিছু দেওয়া যায়, তা আমরা করছি।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের টানা ৯ বছরের শাসনামলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার মানুষের মনে আস্থা বিশ্বাস ফিরে এসেছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা আজকে প্রমাণিত, বিএনপি-জামায়াতের ওপর জনগণের কোনো আস্থা ও বিশ্বাস নেই। কারণ তাদের শাসনামলে অর্থাৎ ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত মানুষ হত্যা থেকে শুরু করে সীমাহীন দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলছিল। দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, এটা তো বাংলাদেশে বলা লাগে না, সুদূর আমেরিকাতেও প্রমাণিত।’
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে ২০০১-২০০৬ মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, বাড়িঘর লুটপাট এবং ২০১৩ সালে সন্ত্রাস ও জ্বালাও-পোড়াও এবং নির্বাচন প্রতিহত করার নামে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়ে সেই আগুনে ফেলে বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ার হত্যা এবং ২৭ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে হত্যার অভিযোগ করেন।
খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ কারাগারে আটকে রাখার যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়া জেলখানায়। আমরা তো পলিটিক্যালি অ্যারেস্ট করি নাই। তাহলে তো ২০১৫, ২০১৪ বা ২০১৩ সালে করতাম।’
বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর তাঁর ছেলে তারেক রহমান দুই মামলার সাজা মাথায় নিয়ে অবস্থান করছেন লন্ডনে। বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া না হলে বাংলাদেশে নির্বাচন ‘হতে দেওয়া হবে না’।
বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খেয়ে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছে। কোর্টের ব্যাপার কোর্টেই সমাধান হবে।’ বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা এতিমের টাকার লোভ সামলাতে পারে না, তারা এই দেশে ক্ষমতায় এসে জনগণকে কী দিতে পারে? কিছুই দিতে পারবে না। তারা লুটে নিতে পারে, লুটে খেতে পারে; ক্ষমতায় যখন ছিল, তখন তাই করেছিল। আবার যদি কোনো দিন ক্ষমতায় আসতে পারে, ওই লুটেই খাবে। দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া, নিজেদের না। আমরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে রাজনীতি করি না। আমরা এটুকুই চাই, বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হোক।’
আমেরিকায় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘তারা (বিএনপি) দুর্নীতির মাধ্যমে এত টাকা বানিয়েছিল যে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইর একজন অফিসারকে তারা কিনে ফেলল, জয়কে অপহরণ এবং হত্যা করার জন্য, যা আবার ধরা পড়ল সেই এফবিআইর হাতে। বিএনপির যে নেতা এই কাজ করেছিল, সে ধরা পড়ার পর তার বিচার হলো এবং সেখানে সেই নেতার শাস্তি হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, সেই মামলার রায়ে বেরিয়েছে, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শফিক রেহমান অর্থ-পরামর্শ দিয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এ বিষয়ে এই দুজনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াতের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ওপর দেশের সাধারণ মানুষের আর কোনো আস্থা নেই। তারা ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করলেও বায়তুল মোকাররমের ধর্মীয় বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে হাজার হাজার কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মসজিদে ঢুকে মানুষ হত্যা করেছে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কলেজছাত্রী কেউ তাদের নির্যাতন-নৈরাজ্য থেকে রেহাই পায়নি।
শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তাঁর সরকারের সাফল্যগাথা ও অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চাইতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে আরো সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং বিগত সাড়ে ৯ বছরে তাঁর সরকারের অর্জনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে।’
১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই প্রতিষ্ঠা পাওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪ বছর পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের শুরুতেই দলের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতিকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। একই দিন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি এবং স্লোগানের মাধ্যমে জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাওসারও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী।