মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নে মনু নদের তিনটি স্থানের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করছে। এতে গ্রাম ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১২ জুন) রাত আড়াইটার দিকে আকস্মিকভাবে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করায় শরীফপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শরীফপুরের বটতলা থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক তিন ফুট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওপর দিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদেরও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদে একটি স্থানে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে। কমলগঞ্জ উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় কমলগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের করিমপুর গ্রাম এলাকায় ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে। দ্রুত গতিতে পানি বেড়েই চলেছে।
কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ জানান, নদের পানি ঢোকার ফলে করিমপুর গ্রামের বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর, ইসলামপুর, কমলগঞ্জ সদর ও আদমপুর ইউনিয়নে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন আহমদ বলেন, করিমপুর গ্রামে ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে পানি প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে ২০ হেক্টর জমির রোপিত আইশ ফসল নিমজ্জিত হয়েছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবারের টানা বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে মঙ্গলবার দুপুর থেকে মনু নদে পানি বৃদ্ধি পায়। মঙ্গলবার বিকেলে শরীফপুর ইউনিয়ন কার্যালয়সংলগ্ন চাতলা সেতু এলাকায় পানি বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী বলেন, মঙ্গলবার শবেকদরের রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমলা বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা মিলে শতাধিত বস্তা বালু দিয়ে এ স্থান রক্ষা করেন। তবে রাত আড়াইটায় বাঘজুর ও তেলিবিল গ্রাম এলাকার প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দ্রুত গতিতে ঢলের পানি গ্রামে প্রবেশ করে। এ পানি বসতঘরসহ ফসরি জমি তলিয়ে নেয়। ফলে বাঘজুর, তেলিবিল, চাঁনপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুর গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী আরো বলেন, এ অবস্থায় পানিবন্দি মানুষজন সঠিকভাবে শবেকদরের ইবাদত করতে পারেনি। এমনকি তারা ঈদুল ফিতরও সঠিকভাবে পালন করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
একই সময় চাতলা সেতুর উত্তর দিকে কয়েক মাস আগে নির্মিত প্রতিরক্ষা বাঁধও ভেঙে ঢলের পানি দ্রুত গতিতে গ্রামে প্রবেশ করে। ফলে নছিরগঞ্জ, ইটারঘাট, মনোহরপুর, নিশ্চিন্তপুর, মাদানগর গ্রামের এক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে।
ঢলের পানিতে শমশেরনগর-চাতলাপুর চেকপোস্ট সড়কের বটতলা থেকে চেকপোস্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক তিন ফুট পরিমাণ পানিতে নিমজ্জিত হলে মঙ্গলবার রাত থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের উত্তর ত্রিপুরার কৈলাসহরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী শরীফপুরে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি স্থানে ভাঙনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মনুর চাতলা সেতু এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৮০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। আবহাওয়ার অবস্থা দৃষ্টে নির্বাহী প্রকৌশলী মনে করেন অবস্থার আরো অবনতি হতে পারে।