সদ্য কিশোর ডিঙ্গানো তরুণীটিকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন মা লাইলী বেগম (৪৫)। বাবা মারা যাওয়ার পর লাইলী বেগম দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন খালেক মোল্লাকে (৫৫)। লাইলী বেগমের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন খালেক মোল্লা।
বাবার মৃত্যুর পর ১৯ মাস বয়স থেকে মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে অযত্ন অবহেলায় বেড়ে ওঠেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া চললেও একসময় তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকেই তাকে বাধ্য করা হয় পতিতাবৃত্তিতে।
এই অমানবিক কাজের জন্য শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েছেন লাইলী বেগম ও তার দ্বিতীয় স্বামী খালেক মোল্লা। গতকাল সোমবার রাতে বরগুনা সদর উপজেলার একটি গ্রাম থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় বরগুনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী তরুণী।
ভুক্তভোগী তরুণী, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, নিষ্ঠুর মা আর মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর নির্দেশে দিন-রাত মেয়েটিকে বাধ্য হয়ে লিপ্ত হতে হতো পতিতাবৃত্তিতে। রাজি না হলেই চলতো নিষ্ঠুর নির্যাতন। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এমন নির্মম নির্যাতনের একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন ওই তরুণী।
গর্ভপাত ঘটানোর জন্য বরগুনার বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে মেয়েটিকে নিয়ে ধরনা দেন অভিযুক্ত মা ও তার স্বামী। সাত মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তার গর্ভপাতে রাজি হননি কেউ। পরে গর্ভপাতের ওষুধ খাওয়ালে সাত মাসের এক জীবন্ত কন্যা শিশু প্রসব করে ভুক্তভোগী ওই তরুণী। জন্মের সাথে সাথে শিশুটির মুখে লবণ দিয়ে মেরে ফেলেন ভুক্তভোগী মা লাইলী বেগম, মায়ের দ্বিতীয় স্বামী এবং দ্বিতীয় স্বামীর মেয়ে। হত্যার পর তারা বাড়ির পাশের এক ঝোঁপের আড়ালে মৃত শিশুটিকে মাটি চাপা দেন।
ঘটনার তিন দিনের মাথায় আবারো একাধিক পুরুষের সঙ্গে ওই তরুণীকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন নিষ্ঠুর মা ও তার স্বামী। গত ২ জুন রাতেও তাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়। সর্বশেষ গতকাল সোমবার (৪ জুন) রাতে পুনরায় তাকে পতিতাবৃত্তির কাজে বাধ্য করতে চাইলে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অপারগতা প্রকাশ করে তাদের কাছে অনুনয় বিনয় করেন। কিন্তু তার কোনো অনুরোধ না শুনে উপরন্তু তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালান মা ও তার দ্বিতীয় স্বামী। এ সময় ওই তরুণীর চিৎকার শুনে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে এ প্রতিবেদকের কার্যালয়ে নিয়ে আসে।
এরপর নারী অধিকার নিয়ে কর্মরত স্থানীয় উন্নয়ন সংগঠন জাগোনারীর প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসির সহযোগিতায় ভুক্তভোগী তরুণীর মুখে নির্যাতনের কথা শোনেন বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণী সোমবার রাতে বরগুনা থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ সুপার বিজয় বসাকের নির্দেশে ওই রাতেই সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আঙ্গার পাড়া গ্রাম থেকে অভিযুক্ত লাইলী বেগম ও খালেক মোল্লাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।