উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ভারি বর্ষণের দেশের চারটি জেলায় দেখা দিয়েছে আকস্মিক বন্যা। আরো কয়েকটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। উজান থেকে যেভাবে ঢল আসছে এবং দেশেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তাতে আগামী দুই থেকে তিন দিন নুতন নতুন জেলা বন্যার কবলে পড়তে পারে। এমন পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। গতবারের মতো এবারও দীর্ঘমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুরুতে আগাম বন্যার কবলে পড়ল হাওরাঞ্চলের জেলাগুলো। যদিও গতবারের সঙ্গে তুলনা করলে এবার কিছুটা দেরিতে হলো বন্যা। গতবার মার্চের শেষের দিকে ও এপ্রিলের শুরুতে বন্যা দেখা দিয়েছিল। এবার শুরু হবে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশের চারটি জেলা আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। আরো কয়েকটি জেলা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমাদের পূর্বাভাস বলছে, সুনামগঞ্জের প্রধান নদীগুলোতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পানি আরো বাড়তে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে আকস্মিক বন্যা শুরু হয়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে নেত্রকোনো, সুনামগঞ্জ, কুমিল্লা নতুন করে বন্যা কবলিত হতে পারে। সিলেট অঞ্চলের আটটি নদীর পানি ১৩ পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীগুলো হলো, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, খোয়াই, সুতং, কংস, কালনী ও বাউলাই। সুরমা নদীর কানাইঘাট স্টেশনে বিপদসীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা স্টেশনে ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রদেশ মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা রাজ্যে এবারও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতেও প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এ কারণে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, গত কয়েকদিন সিলেট, কিশোরগঞ্জ এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী দুই দিনও ভারী বর্ষণ হবে এই দুই জেলায়।
আবহাওয়া কর্মকর্তা শাহীনুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, সিলেটে মঙ্গলবার সারা দিনে ৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিশোরগঞ্জেও বৃষ্টিপাত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহজুড়ে সিলেট, হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় ভারী বর্ষণ হতে পারে।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস ও ভারতের আবহাওয়া অফিসের গাণিতিক মডেলের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার হবিগঞ্জ জেলাগুলোতে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হবে। একই সঙ্গে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রদেশ আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হবে। এর ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে জেলার কিছু স্থানে বিদ্যমান আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
অন্যদিকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রধান নদ নদীতে পানি বাড়তে পারে। এতে কোথাও কোথাও আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। কালনী নদীর আজমিরিগঞ্জ স্টেশনে এখন বিপৎসীমার ১২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সারিগোয়াইন নদীর পানিও বাড়ছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মে মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হবে। জলবায়ু মডেল, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের আবহাওয়া চিত্র, জলবায়ু ভবিষ্যধানী টুলস (সিপিটি) এল নিনো, লা নিনার অবস্থা যথাযথ বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে দুটি নিম্নচাপ হতে পারে। এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এই মাসে উত্তর মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত দুই তিন দিন তীব্র কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। নদ নদীর পানি বাড়তে থাকবে। চলতি মাসে দেশের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বন্যা হতে পারে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি।
উল্লেখ্য, গতবার দেশে দুই দফা বন্যা হয়েছিল। প্রথমবার দেশের হাওরাঞ্চলে। পরেরবার দেশের ৩২ জেলায়। তা ছিল দীর্ঘমেয়াদি। গতবারের বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রাণ গেছে অনেকের।