Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। বিএনপি নির্বাচনে এলে ক্ষমতাসীন দলের সাথে জোটগতভাবে আর না এলে এককভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে- এমন প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে দলটি। অর্থাৎ জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে এককভাবে না ক্ষমতাসীন দলের সাথে জোটগত নির্বাচন করবে তা নির্ভর করছে বিএনপির সিদ্ধান্তের ওপর। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টি এখন অনেকটাই পেণ্ডুলামের মতো দুলছে।
জাতীয় পার্টির একাধিক সিনিয়র নেতা আলাপকালে নয়া দিগন্তকে জানান, নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশদলীয় জোট অংশ নিলে ২০০৮ সালের মতোই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হয়েই ভোটের লড়াইয়ে নামবে জাতীয় পার্টি। আর না এলে এককভাবে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হবে। এমন চিন্তাভাবনা মাথায় রেখেই নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ:) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। একইভাবে জাতীয় পার্টিও নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে দিয়েছে। দলটির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও হজরত শাহজালালের (রহ:) মাজার জিয়ারতের মধ্য দিয়ে সিলেট থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। তিনি দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাঙ্গলের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। অর্থাৎ বিএনপির আগামী নির্বাচন বর্জন অথবা অংশগ্রহণ এ দুইটি বিকল্প সামনে রেখেই সরকারে থাকা দল দুইটি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে বিএনপি না এলেও নির্বাচনী মাঠে কোনো চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে না বলেই ভাবছে আওয়ামী লীগ।

আর বিএনপি এলেও যেন সমস্যায় পড়তে না হয়, সে জন্যই আবারো মহাজোটের বিকল্প চিন্তাও মাথায় রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বলেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা জাতীয় পার্টির সাথে জোটগতভাবেই অংশ নেবো। আর বিএনপি না এলে জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করবে। একই সুরে কথা বললেন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান মন্ত্রিসভার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও। তিনি বলেন, আমরা তো এখনো মহাজোটেই আছি। বিএনপি ভোটে এলে একসাথেই লড়ব। আর না এলে বিকল্প ভাবনা তো আছেই। এর বাইরে তো আর বিকল্প নেই।

এ ব্যাপারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক সচিব ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায় বলেন, আগামী নির্বাচনে দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ কাজ করছেন। দলকে সুসংগঠিত করতে সারা দেশ চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এতে দলীয় নেতাকর্মীরাও ব্যাপক সাড়া দিচ্ছেন। তাছাড়া রংপুর ও গাইবান্ধায় পরপর দুইটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর জয়লাভে দলের নেতাকর্মীরাও চাঙ্গা। ফলে জোটে থেকেই সারা দেশে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।

বিগত নির্বাচনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ে ১.৩৮ শতাংশ বেশি ভোট পেয়ে বিএনপি আসন বেশি পায় ১৫৯টি। আওয়ামী লীগ যেখানে পায় ৬২ আসন, সেখানে বিএনপি পায় ১৯৩টি। ওই নির্বাচনে বিএনপি জোটের শরীক জামায়াত ভোট পেয়েছিল ৪.২৬ শতাংশ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪.৬ শতাংশ। আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নিতে না পারলে এ ভোট যদি অন্য কোনো বড় দলের বাক্সে পড়ে, তাহলে তা জয়-পরাজয়ের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে। কারণ ২০০১ সালে ৬২ আসনে জেতা আওয়ামী লীগ ৮৫টি আসনে হারে পাঁচ থেকে ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে। অর্থাৎ তখন জোটের সুবিধা পেয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দল।
অপর দিকে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ভোট পায় ১১.৯ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ১৬.৪ শতাংশ, ২০০১ সালের নির্বাচনে ৭.২২ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ৭ শতাংশ ভোট পায়। তবে বিএনপি-জামায়াত জোটসহ অন্যান্য দলের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি ভোট পায় ১১.৩১ শতাংশ। অর্থাৎ সর্বশেষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ৭ শতাংশ ভোট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাক্সে পড়লে এ জোট আবারো জিতে ক্ষমতায় আসবে- এমনটাই মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। যদিও ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি বাতিল হওয়া নির্বাচনের আগে বামপন্থীদের জোট ১৪ দল, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি ভেঙে বের হয়ে আসা এলডিপি নিয়ে মহাজোট করে আওয়ামী লীগ। পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে এলডিপিকে বাদ দিয়ে মহাজোট নির্বাচনে বিশাল জয় পায়। আওয়ামী লীগ ভোট পায় ৪৯ শতাংশ, আসন পায় ২৩০টি। বিএনপি ভোট পায় ৩৩ শতাংশ, আসন পায় ৩০টি।

বিএনপি না এলে ৩০০ আসনে জাপার প্রার্থী : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি আবারো বর্জন করলে ২০১৪ সালের মতো পরিস্থিতি তারা আর তৈরি করতে পারবে বলে মনে করে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি। আর সে ক্ষেত্রে কোনো আসনেই একে অপরকে ছাড় দেয়া হবে না বলে জানান নেতারা। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির স্পষ্টবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বিএনপি এবারো নির্বাচনে না এলে জাতীয় পার্টি ২০১৪ সালের মতো সমঝোতা করে কিছু আসনে ভোট করবে না। তখন জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে। তবে চুন্নুর ধারণা এবার আর বিএনপি ভোট বর্জন করবে না। কারণ এবার বিএনপির নির্বাচনে না এসে আর কোনো উপায় নেই। তারা দেখেছে, ভোট ছাড়াই ১৫৩ জন এমপি পাঁচ বছর থেকেছে। জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে যদি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয় তাহলেই তো নির্বাচন বৈধ হয়ে যাবে। কারণ দেশে তো আর রাজনৈতিক দলের অভাব নেই। তারাও নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই আছে।

একই ধারণা পোষণ করেন দলটির অপর প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপিও। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য অন্তত পক্ষে অর্ধশতাধিক দল রেডি হয়ে আছে। তা ছাড়া ডজনখানেক ছোট ছোট জোট হয়ে আছে। তারা হালুয়া-রুটির ভাগ-বাটোয়ারায় শামিল হতে অনেকটা প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছে। একটি দেশে এতগুলো রাজনৈতিক দল অংশ নিলে সে নির্বাচন একতরফা হয়েছে- এমন অভিযোগ আর টিকবেনা। তখন আর বিশ্বের কোনো দেশই দেখবে না কোনো দল (বিএনপি) নির্বাচন করেছে কি না।

জাপার আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, এবারের নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিও সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে দলীয় চেয়ারম্যান সফরও শুরু করে দিয়েছেন। তা ছাড়া রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল। সেই চাঙ্গাভাবকে আরো শাণিত করে তুলেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ আসনে আবার দলীয় প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায়। ফলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় সুসংগঠিত।

জাপা বেশী আসন চাইবে : ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির বাতিল হওয়া নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৫০টিরও বেশি আসনে ছাড় দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। তবে দুই বছরের জরুরি অবস্থা শেষে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আসন কমিয়ে দিয়ে ৩৫টির মতো আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। আর কয়েকটি আসন দুই দলের জন্যই উন্মুক্ত রাখা হয়। দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি বিভিন্ন আসনে একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করলেও কিছু আসনে আবার সমঝোতাও হয়। আর আওয়ামী লীগ যেসব আসনে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিয়েছিল, মূলত সেগুলোতেই তারা জিতে আসতে পেরেছে।

জাতীয় পার্টির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, এবার জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগ একত্রে নির্বাচন করলে নবম সংসদ নির্বাচনে যে কয়টি আসনে জোটের মনোনয়ন পেয়েছিল, এবার তার চেয়ে বেশি আসন চাইবে। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, জাতীয় পার্টিকে রংপুর বিভাগে বেশি ছাড় দেয়া হবে। এর বাইরে বগুড়ায় এক বা একাধিক, রাজশাহী বিভাগে দুই বা তিনটি, কিশোরগঞ্জে একটি, ঢাকায় এক বা দুটি, নারায়ণগঞ্জে একটি, সিলেট বিভাগে একাধিক, চট্টগ্রামে একটি বা দুটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি, কুমিল্লায় এক বা একাধিক, খুলনা বিভাগে একাধিক, ময়মনসিংহে দুই বা তিনটি, টাঙ্গাইলে একটি আসনে ছাড় দেয়া হতে পারে।

আওয়ামী লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, যেসব আসনে এখন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য আছেন, তাদের ছাড় দেয়া হবে, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তবে দু-একজনের ভাগ্য পুড়তে পারে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক দর কষাকষি হবে বলেও জানান আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতারা।

এরশাদের মহাজোট ত্যাগ নাটক : ২০০৮ সালে জোটবদ্ধ হয়ে ভোট করে জাতীয় পার্টি ২৭ আসনে জিতে আওয়ামী লীগ সরকারেরও অংশীদার হয়। তবে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বিএনপিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু পরে নিজেই আবার নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। এরশাদকে নির্বাচনে আনতে প্রতিবেশী একটি দেশের বড় মাপের একজন কূটনীতিক দেনদরবারও করেন। তিনি এরশাদের বারিধারার বাসভবনে সশরীরে এসে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। কিন্তু তাতেও এরশাদকে টলাতে পারেননি। পরে এরশাদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে বলেছিলেন- তাকে নির্বাচনে আসার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে।

এভাবে বৈঠকের বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় এরশাদের ওপর ভীষণ বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হন দেশটির নীতিনির্ধারকেরা এরশাদের এ বক্তব্যকে কূটনৈতিক-শিষ্টাচার বিবর্জিত বলে তখন ওই দেশটির পক্ষ থেকে অভিযোগের কথা জানা যায়। এমন টানাপড়েনের একপর্যায়ে অসুস্থ ঘোষণা করে এরশাদকে ভর্তি করা হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। নির্বাচন পর্যন্ত তাকে সেখানেই থাকতে হয়। এমন অবস্থায় এরশাদকে বাগে আনতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তারা রওশনের শরণাপন্ন হয়ে তার নেতৃত্বে দলের একাংশকে ভোটে রাখতে সক্ষম হয়। ‘অনিচ্ছার’ মধ্যে রংপুর-৩ আসন থেকে এরশাদকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণা করা হলেও তিনি শপথ নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। পরের ঘটনা সবার জানা। নির্বাচন শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ভোটের ছয় দিন পর ১১ জানুয়ারি অনেকটা নাটকীয়তার মধ্যে শপথ নেন তিনি। পর দিন বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানেও সস্ত্রীক হাজির হন এরশাদ। মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দুইজন প্রতিমন্ত্রী স্থান পায়। ওই শপথ অনুষ্ঠানের পর এক প্রজ্ঞাপনে এরশাদকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও করা হয়। আর সংসদে দলের সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ হন বিরোধী দলের নেতা। সেই থেকেই দলটি সরকার ও বিরোধী দল উভয় পক্ষে রয়ে গেছে। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল ও দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এবং দেশবাসীকে ‘বোকা’ বানাতে মাঝে মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার হুঙ্কার দেয়া হলেও তা কখনোই কার্যকর হয়নি। ফলে দেখতে দেখতে সরকারের পুরো মেয়াদই শেষ হওয়ার পথে। সরকারের শেষ মুহূর্তে এসে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদে রওশন অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় পার্টি আসলে সরকারি দলে নাকি বিরোধী দলে- কেউ এমন প্রশ্ন রাখলে এর সদুত্তর দিতে পারি না। ফলে জাপা তার প্রাপ্য সম্মানের জায়গায় নেই। এরপর ২ মার্চ রংপুরে এরশাদ বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী আছেন, আমিও মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আছি। আমরা কিছু দিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করব। কারণ মন্ত্রিত্ব নিয়ে আমরা সমালোচনার মুখে পড়েছি। দেশের মানুষের কাছে আমাদের দলের ভাব মর্যাদা ক্ষুণœ হয়েছে। দুই দিন পর গাইবান্ধায় গিয়ে এরশাদ আবার বলেন, তার দল সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চায়। এ জন্য শিগগিরই দলীয় মন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন। তাদের পদত্যাগের পর তিনিও বিশেষ দূতের আসন থেকে পদত্যাগ করবেন। অবশ্য এরশাদ এর আগেও একাধিকবার নিজে ও দলের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

গত বছরের ৩ আগস্টও তিনি বনানীতে দলীয় এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভা থেকে তার দলের সদস্যদের এবং বিশেষ দূতের পদ থেকে নিজের পদত্যাগের কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। এবার মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে এখনো দলীয় ফোরামে বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সাথে কোনো আলোচনাই করা হয়নি বলে তারা জানান। ফলে নতুন করে জাপার সদস্যরা মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসছে- এরশাদের এমন ঘোষণা জনগণের মধ্যে আর কোনো গুরুত্ব পাচ্ছে না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top