চীনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য আমেরিকাকে প্রস্তুতি নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন নৌবাহিনীর একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডার অ্যাডমিরাল হ্যারি হ্যারিস মার্কিন কংগ্রেসের এক শুনানিতে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর আধিপত্য বিস্তারের সুস্পষ্ট অভিপ্রায় দেখাচ্ছে বেইজিং। কাজেই চীনের সাথে সঙ্ঘাত অনিবার্য হয়ে উঠছে।
মার্কিন কংগ্রেসের সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক কমিটির শুনানিতে অ্যাডমিরাল হ্যারিস বলেন, “আঞ্চলিক অঙ্গনে চীনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে আমি এই আশঙ্কা করছি যে, শুধু প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল নয় সেইসাথে গোটা বিশ্বে আন্তর্জাতিক আইন-ভিত্তিক ব্যবস্থা উপেক্ষা করতে যাচ্ছে চীন।”
মার্কিন এই নৌ কর্মকর্তা আরো বলেন, “এখনই যদি আঞ্চলিকভাবে চীনকে প্রতিহত করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতের রণাঙ্গনগুলোতে পিপলস লিবারেশন আর্মির সাথে পেরে ওঠা কঠিন হয়ে যাবে।”
চীন যেভাবে তার সামরিক বাহিনীর আধুনিকীকরণ করছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্বের ‘প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে’ মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে বলে অ্যাডমিরাল হ্যারিস আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মার্কিন সিনেটে পাস হলো না বিল, অনিশ্চয়তায় ১৮ লাখ অভিবাসী
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ড্রিমার’ অভিবাসীদের সুরা প্রদানসহ অভিবাসন প্রশ্নে উত্থাপিত চারটি বিলের একটিও অনুমোদন করেনি মার্কিন সিনেট। এর মধ্য দিয়ে শৈশবে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী ১৮ লাখ অভিবাসীর ভবিষ্যৎ আবারো অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বৃহস্পতিবার চারটি ভিন্ন বিল পাসে প্রয়োজনীয় ৬০ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছে সিনেট।
শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের কাজের অনুমতি দিতে ‘ড্রিমার’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন। এর আওতায় কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে বিরত ছিল হোয়াইট হাউজ। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে মূলত তরুণ অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সুরা দিতে চেয়েছিল ওবামা প্রশাসন। এ কর্মসূচির দাফতরিক নাম ‘ডেফারড অ্যাকশন ফর চিলড্রেন অ্যারাইভাল’ (ডিএসিএ)।
এ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, পড়াশোনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পান প্রায় সাত লাখ তরুণ। এই তরুণদের বলা হয় ‘ড্রিমার’। তবে গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি সমাপ্তির ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্য দিয়ে মার্চ থেকে বিতাড়িত হওয়ার হুমকিতে পড়েন ড্রিমারেরা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষিত ‘ডিএসিএ কর্মসূচি’ পরিচালনায় বরাদ্দ অর্থ নিয়ে বিভক্ত ছিল মার্কিন সিনেট। সম্প্রতি ওই কর্মসূচির আওতায় থাকা সাত লাখ তরুণ অভিবাসীর ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানকে সমঝোতার শর্ত হিসেবে তুলে ধরেছিল ডেমোক্র্যাটরা। এ নিয়ে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মতানৈক্যের জেরে তিন দিন শাটডাউনে থাকে মার্কিন সরকার। তবে রিপাবলিকান নেতা ম্যাককনেলের দেয়া ভবিষ্যৎ বিতর্কের মৌখিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে সরকার সচলে ডেমোক্র্যাট সিনেটরেরা অস্থায়ী বাজেট পাসে সম্মত হয়। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ড্রিমারদের ভাগ্য নির্ধারণে সিনেটে সোমবার থেকে বিতর্ক শুরু হয়। তবে বৃহস্পতিবার অভিবাসন প্রশ্নে উত্থাপিত চারটি বিলের একটিও পাস হয়নি।
চারটি বিলের মধ্যে একটি ট্রাম্প সমর্থিত; আর বাকি তিনটি দ্বিদলীয় বিল। গভীরভাবে বিভাজিত সিনেটে এ বিলগুলো পাস হবে বলে আশা করা হয়েছিল। ট্রাম্প যে রিপাবলিকান বিলটিতে সমর্থন দিয়েছিলেন তা ছিল মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে বরাদ্দ দেয়ার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ড্রিমার অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রদান। অন্যদের পাশাপাশি ট্রাম্পের নিজ দলের ১৪ সিনেটরও বিলটির বিরোধিতা করে। ৬০-৩৯ ভোটে বিলটি হেরে যায়। দ্বিদলীয় বিলগুলোও প্রয়োজনমাফিক সমর্থন পেতে ব্যর্থ হয়। সিনেটে ভোটাভুটির কয়েক ঘণ্টা আগে দ্বিদলীয় বিলগুলোকে ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
ডেমোক্র্যাটদের অভিযোগ, ট্রাম্পের অসমঝোতামূলক আচরণ কংগ্রেসে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টাকে ডুবিয়ে দিচ্ছে। সিনেট ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার বলেন, ‘এ ভোটই প্রমাণ দিচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনা কখনো আইনে পরিণত হবে না। তিনি যদি দ্বিদলীয় প্রচেষ্টাকে ভণ্ডুল করার চেষ্টা না করতেন তাহলে একটি ভালো বিল পাস করা যেত।’ বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউজের প থেকেও একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বিল পাস না হওয়ার জন্য ডেমোক্র্যাটদের দায়ী করে বলা হয়, ‘তারা অভিবাসন সংস্কারকে গুরুত্বের সাথে নেয়নি। তারা দেশের নিরাপত্তার ব্যাপারেও উদগ্রীব নয়।’ – রয়টার্স ও আলজাজিরা