ঝালকাঠিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কন্যা উৎসব। ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে আগামী শুক্রবার দিনব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা ঝালকাঠির আট হাজার নারী নিবন্ধন করেছে।
কন্যা উৎসব ঘিরে নানা আয়োজন চলছে। শহরের গুণী পাঁচ কন্যা এই অনুষ্ঠানের স্বপ্নদ্রষ্টা। উৎসব সফল করতে পঞ্চকন্যার সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
কন্যা উৎসব উদ্যাপন কমিটির সদস্যরা জানান, দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নিয়ে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে কন্যাদের মিলনমেলা, আলোচনাপর্ব, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ঝালকাঠির কন্যাদের পদক প্রদান, রত্নগর্ভা মায়েদের সম্মাননা ও সম্ভাবনাময়ী কৃতী কন্যাদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ। এ ছাড়া রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সংগীত পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। গত ৮ জানুয়ারি শহরের একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজকরা আনুষ্ঠানিকভাবে কন্যা উৎসবের ঘোষণা দেয়। কন্যা উৎসবের স্বপ্নদ্রষ্টা ঝালকাঠি জেলা পরিষদের সদস্য শারমিন মৌসুমী কেকা, পৌর কাউন্সিলর নাছিমা কামাল, সদর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার, শিক্ষক শিমুল সুলতানা হ্যাপি ও জাফরিন ফারজানা শিমুল।
বিরোধিতা, উত্তেজনা
এদিকে কন্যা উৎসবের ঘোষণা দেওয়ার পর পর বাংলাদেশ আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বানে ঝালকাঠি শান্তিকামী জনতার ব্যানারে বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক সংগঠন বিরোধিতা করে। তারা অনুষ্ঠানের স্থান পরিবর্তন করে শিল্পকলা একাডেমি এবং কন্যা উৎসবের নাম পরিবর্তন করে মহিলা সমাবেশ রাখার শর্ত দেয়। কিন্তু আয়োজকরা তাদের অবস্থানে অটল থাকায় বিষয়টি নিয়ে ক্রমান্বয়ে উত্তেজনা বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৪ জানুয়ারি বিকেলে ঝালকাঠির নেছারাবাদে খানকায়ে মুছলিহিনে বৈঠক বসে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, সমাজসেবক হেমায়েত হোসেন হিমু, আওয়ামী লীগ নেতা সিদ্দিকুর রহমান, সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন খানসহ স্থানীয় আলেম-উলামা, বাংলাদেশ আদর্শ সমাজ বাস্তবায়ন পরিষদ ঝালকাঠি জেলা শাখা, ইমাম সমিতি ও মাদরাসা সংগঠনের নেতারা।
সভায় মাওলানা খলিলুর রহমান বলেন, ‘কথিত এ উৎসব ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।’ কন্যা উৎসব বন্ধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এর পরে আয়োজকরা অনুষ্ঠানটি দুই দিনের পরিবর্তে এক দিন এবং স্থান সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। একই বিষয় নিয়ে ১৫ জানুয়ারি মাওলানা খলিলুর রহমানের মেয়ে বাংলাদেশ আনজুমান খাওয়াতিনের আমির উম্মে ছালমা হাফসা আয়োজকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি কন্যা উৎসবের নাম পরিবর্তন করে নারী সমাবেশ করার আহ্বান জানান। তিনি ওই অনুষ্ঠানে নারীদের সামাজিক ও পারিবারিক কর্মকাণ্ডে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান। তবে অনুষ্ঠান আয়োজনের ব্যাপারে অটল রয়েছে আয়োজকরা। অন্যদিকে দুই দিন ধরে কন্যা উৎসব অনুষ্ঠান বর্জনের আহ্বান জানিয়ে একটি লিফলেট শহরে বিতরণ করা হচ্ছে। সচেতন নারী সমাজের ব্যানারে কন্য উৎসবের বিরোধিতা করে বক্তব্য রয়েছে এ লিফলেটে। এতেও থেমে নেই আয়োজকরা।
অন্যতম আয়োজক সদর উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার বলেন, ‘উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। সব বাধা উপেক্ষা করে আমরা আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠান করব। এ উপলক্ষে ঝালকাঠি সরকারি হরচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয় সাজানো হচ্ছে। সাজসাজ রব বিরাজ করছে শহরের আনাচকানাচে। উৎসব নারীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে। উৎসব বন্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শিল্পমন্ত্রী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন।’
‘উপস্থিতি বাড়বে ছাড়া কমবে না’ বলে জানিয়েছেন আয়োজকদের একজন নাছিমা কামাল। তিনি বলেন, ‘উৎসবে যাদের সম্মাননা দেওয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। ৫০ জনকে এ সম্মাননা দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে কয়েকজন রত্নগর্ভা মা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা কন্যারা রয়েছেন।’
এ বিষয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এম এম মাহামুদ হাসান বলেন, ‘কন্যা উৎসবে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে ঝালকাঠির কন্যারা আসবে। উৎসব নিয়ে একটি পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। এখানে কাউকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ উল্টাপাল্টা কিছু করার চেষ্টা করে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. হামিদুল হক বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’