শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়মের সাথে যারাই জড়িত, তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এ সব ব্যাপারে আমরা জিরো টলারেন্স। মন্ত্রণালয়ের দু’জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি আজ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন অপরাধী হিসেবে কেউ চিহ্নিত হলে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অপরাধীকেই প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
আগের খবরে বলা হয়,দুই দিন ধরে নিখোঁজ থাকা শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো: মোতালেব হোসেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসির উদ্দিনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রোববার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নানা দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মোতালেব ও নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া গ্রেফতারের সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গ্রহণ ও বিতরণ শাখার উচ্চমান সহকারী নাসিরের কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা। এ দিকে গ্রেফতার দেখানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আজ আদালতে হাজির করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাদের রিমান্ড চাইবে বলে একটি সূত্র জানায়।
গত দুই দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ দুই কর্মকর্তা-কর্মচারী নিখোঁজ হন। গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে নিখোঁজ হন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) মো: মোতালেব হোসেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) শিা মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে কর্মরত উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন নিখোঁজ হন।
এ ছাড়া আরো এক কর্মকর্তার বাসায় গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা খোঁজখবর নিয়েছেন। এ নিয়ে শিা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গতকাল বিকেলে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। বৈঠকে কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে উপস্থিত একটি সূত্র জানান। বৈঠক শেষে শিামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কেন ও কারা তাদের নিয়ে গেল, তা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। বিষয়টি জানার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও র্যাবের মহাপরিচালকসহ বিভিন্নপর্যায়ে কথা বলেছেন তিনি।
ওই দুই কর্মকর্তা-কর্মচারীর নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে গতকাল দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে অবহিত করে চিঠি দেয়া হয়েছে। অন্য দিকে নিখোঁজদের স্বজনেরা নিজ নিজ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। গতকাল সকালে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ শিামন্ত্রীর বাসায় গিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন বলে জানা গেছে।
শিা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সর্বশেষ গত শনিবার বিকেলে শিামন্ত্রীর পিও মো: মোতালেব হোসেনকে রাজধানীর বছিলা এলাকা থেকে কয়েক ব্যক্তি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মোতালেব সেখানে তার নির্মাণাধীন ১০তলা বাড়ির কাজ তদারক করতে গিয়েছিলেন। কয়েক ব্যক্তি এ সময় বাড়ি ভাড়া নেয়ার ব্যাপারে আলাপ করার কথা বলে মোতালেব হোসেনকে নিচে নামিয়ে আনে। কথা বলার একপর্যায়ে তারা তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে হাজারীবাগ থানায় তার ভাই শনিবার একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ডায়েরিতে বলা হয়, শনিবার বেলা সাড়ে ৪টায় বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেননি। তার ব্যবহৃত দু’টি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার শিা মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে কর্মরত উচ্চমান সহকারী নাসিরউদ্দিন নিখোঁজ হন। তিনি খিলতে এলাকার লেকসিটি কনকর্ড অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করতেন। অফিসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হওয়ার কিছু সময় পরই তিনি নিখোঁজ হন। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন দু’টিও বন্ধ পাওয়া গেছে বলে বনানী থানায় দায়ের করা জিডিতে উল্লেখ করেন তার শাশুড়ি। নিখোঁজ এ কর্মচারীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
একই দিনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরেকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু আলম খানের বাসায় গিয়ে কয়েক ব্যক্তি খোঁজখবর নিয়ে আসেন বলে শিা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান। আবু আলম বিষয়টি গতকাল সকালে মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে অবহিত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই সাথে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চান। মন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত শিা মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বনভোজনে বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন।