মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাথে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে।
ট্রাম্প বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সাথে এক টেলিফোন সংলাপের সময় এই প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেন বলে এসব গণমাধ্যম জানায়।
ট্রাম্প দুই কোরিয়ার মধ্যকার সাম্প্রতিক আলোচনা এবং আসন্ন শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য অংশগ্রহণ নিয়ে বুধবার জায়ে-ইনের সাথে প্রায় আধাঘণ্টা কথা বলেন।
ফোনালাপের এক পর্যায়ে কিম জং-উনের সাথে সরাসরি কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
এর আগে মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র সম্পর্কে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজনে তিনি কিম জং-উনের সাথে কথা বলতে রাজি আছেন।
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া গত দুই বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে মঙ্গলবার দুই দেশের সীমান্তবর্তী পানমুনজমে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় মিলিত হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শত্রুভাবাপন্ন দুটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা হয়েছিল।
মঙ্গলবারের বৈঠকে দুই কোরিয়া বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি লি ডু হুন দাবি করেন, কোরীয় উপদ্বীপের উত্তেজনা কমিয়ে আনতে সামরিক আলোচনা করতেও রাজি হয়েছে উত্তর কোরিয়া। তবে পিয়ংইয়ং বলেছে, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না।
অভিবাসী কর্মসূচি বাতিলের ওপর মার্কিন বিচারকের নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলের একটি অভিবাসী কর্মসূচি বাতিল করা প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের ওপর দেশটির একজন বিচারক গত মঙ্গলবার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সান ফ্রানসিস্কো-ভিত্তিক বিচারক উইলিয়াম অলসুপ ডিফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস (ডিএসিএ) কর্মসূচি পুনর্বহালে ট্রাম্পের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ৪৯ পাতার রুলিং জারি করেন। উচ্চ আদালতে তার নিদের্শনা বাতিল না করা পর্যন্ত ডিএসিএ’র আগের সুযোগ গ্রহণকারীরা নবায়ন আবেদন জমা দেয়ার সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে কর্মসূচিটি আবারো চালু করে সরকার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে। এ নিয়ে ৯ জানুয়ারি গত মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শৈশবে বাবা-মায়ের সাথে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো অভিবাসীদের কাজের অনুমতি দিতে ‘ড্রিমার’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ওবামা প্রশাসন। এর আওতায় কয়েক লাখ অবৈধ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো থেকে বিরত ছিল হোয়াইট হাউজ। তাদের যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে কাজের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর মাধ্যমে মূলত তরুণ অনিবন্ধিত অভিবাসীদের সুরা দিতে চেয়েছিল ওবামা প্রশাসন। এ কর্মসূচির দাফতরিক নাম ‘ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল’ (ডিএসিএ)। এ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস, পড়াশোনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পান ৮ লক্ষাধিক তরুণ। এই তরুণদের বলা হয় ‘ড্রিমার’। তবে গত সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পটি সমাপ্তির ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের সেই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য রুল জারি করেছে সান ফ্রান্সিসকোর আদালত।
মঙ্গলবার বিচারপতি উইলিয়াম আলসুপ বলেন, যেহেতু মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই এই কর্মসূচি বহাল রাখতে হবে। রুলে বলা হয়, যারা এই কর্মসূচির আওতায় আগে কখনো সুরা পাননি তাদের কাছ থেকে নতুন আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া চালানোর দরকার নেই। তবে যারা আগে এই কর্মসূচির আওতায় সুরতি ছিলেন তাদের আবেদন নবায়নের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি উইলিয়াম। এই রুলের কারণে ট্রাম্প ও কংগ্রেসীয় নেতাদের মধ্যে অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্কার নিয়ে আলোচনার বিষয়টি জটিল হয়ে পড়তে পারে।
এ দিকে আট লক্ষাধিক ড্রিমারসহ সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীর ভাগ্য নির্ধারণী বিল নিয়ে ৯ জানুয়ারি মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাদের সাথে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্চের প্রথম শেষ সপ্তাহেই (ডিএসিএ) কর্মসূচি বাতিল হয়ে যাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ নির্বাহী আদেশে। এটি অব্যাহত রাখতে কংগ্রেসকে তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও। কংগ্রেস যদি এসব তরুণ-তরুণীর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে একটি বিল পাস করে তাহলে ট্রাম্প আপত্তি জানাবেন না বলেও ওই বিশেষ আদেশ প্রদানের সময় উল্লেখ করেছেন।
তবে এর বাইরে আরো প্রায় সোয়া কোটি অবৈধ অভিবাসীকে বৈধতা প্রদানের কোনো আগ্রহই ছিল না ট্রাম্পের। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটের অনুমোদনের আগে অভিবাসন ইস্যুতে রিপাবলিকানদের অকুণ্ঠ সমর্থনের শর্ত দিয়েছেন। ১৯ জানুয়ারির মধ্যেই সেই অন্তর্বর্তীকালিন বাজেট বিল পাস করতে হবে, অন্যথায় ফেডারেল সরকারের কাজকর্ম অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। এমন অবস্থায় কংগ্রেসের উভয়কক্ষের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট নেতাদের হোয়াইট হাউজে ডেকে এই বৈঠকে বসেন।
প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেটে উভয় দলের ২৪ জনের মত নেতা ছিলেন এ বৈঠকে। এ সময় ট্রাম্প বিশেষভাবে আরো বলেন, ‘অভিবাসন ইস্যুতে আমার এমন নমনীয়ভাবকে অনেক সমর্থকই মেনে নিতে পারবে না। আমি এটি ভালো করেই জানি। তবুও বৃহত্তর স্বার্থে সবকিছু করতে চাই।’
উল্লেখ্য, গত জাতীয় নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্য করেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসন-বিরোধী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহনের আগ্রহও ব্যক্ত করেন। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে বসবাসরতদের গ্রেফতার অভিযানও জোরদার করেছেন। এমনি অবস্থায় নিজ উদ্যোগে হোয়াইট হাউজে উভয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের ডেকে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে কথা বলার ঘটনায় সমগ্র কমিউনিটিতে স্বস্তি নেমে এসেছে। – এএফপি, রয়টার্স ও এনআরবি