শীতের এখন ভরা যৌবন। তাপমাত্রা কমে এসেছে উল্লেখযোগ্য। শীতকালীন সবজির এটাই সর্বোচ্চ সময়; কিন্তু বাজারে এর প্রতিফলন খুবই সামান্য। মধ্য শীতেও বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়তি। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম বেড়েছে ফুলকপি, খিরা, গাজর, শিমসহ প্রায় সব সবজির। দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য বছর এ সময়ে বাজারে নতুন পেঁয়াজের আধিপত্য লক্ষ করা গেলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। বাজারে স্বল্প পরিমাণে নতুন পেঁয়াজ উঠলেও বাজারকে প্রভাবিত করতে পারছে না। ফলে ক্রেতাদের অস্বস্তিও কাটছে না।
গতকাল রাজধানী ঢাকার কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের তুলনায় বেশির ভাগ সবজির দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে যে ফুলকপি ২০ থেকে ২২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল গতকাল সেটি বিক্রি হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। ৩০ টাকার করলা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। আগের সপ্তাহে নতুন আলু ২০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হলেও গতকাল ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। ৩০ টাকার শসা-খিরাই বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেগুন। তবে শালগম ও মুলা বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে।
ভরা শীতেও সবজির দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তালতলা মার্কেটের বিক্রেতা আবুল কালাম বলেন, শীত বেড়ে যাওয়াই সবজির দাম বাড়তির কারণ। তার মতে, শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে কুয়াশাও বাড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে গ্রামাঞ্চল থেকে সবজিবাহী গাড়ি ঢাকায় আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এ কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এখন আর গ্রামেও কম দামে সবজি পাওয়া যায় না। কারণ উৎপাদন খরচ বাড়তি। সার, বীজ, শ্রমিক, লাঙ্গল সব কিছুরই বাড়তি দাম। বিশেষ করে চালের দাম বাড়তি থাকায় কৃষক চাইলেও কম দামে সবজি বিক্রি করতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন কালাম।
রামপুরা বাজারে সবজি কিনতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা সদরুল বলেন, শীতকালে সব সবজির দামই কম থাকে। তারই কিছুটা প্রভাব বাজারে দেখা যাচ্ছে। বেশির ভাগ সবজির দামই এক মাসের ব্যবধানে বেশ কমেছে। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা বাড়তি। তিনি বলেন, ভরা শীতের এই মওসুমে শিম, ফুলকপি ও টমেটোর দাম আরো কম হওয়া উচিত। তারপরও এখন বাজারে সবজির দাম যা, তা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক। ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানো গেলে সবজির দাম আরো কম থাকত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ দিকে পৌষ মাসে পেঁয়াজের ভরা মওসুমেও অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম আকাশছোঁয়া। দেশী পেঁয়াজ খুচরা বাজারে গতকালও ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। দেশী পেঁয়াজের পাইকারি দর ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর আমদানি করা ভারতীয় লাল পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। মূলত দেশে তিন দফা বন্যা ও পেঁয়াজ আমদানির প্রধান বাজার ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের চাষ ব্যাহত হওয়ায় আশ্বিন মাসের শেষের দিকে দেশের বাজারে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। এরপর দফায় দফায় বেড়ে দেশী পেঁয়াজের দাম পৌঁছে কেজি-প্রতি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায়। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয় অগ্রহায়ণ থেকে মাঝ পৌষ পর্যন্ত।
তবে দেশী জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করায় দামে একটু ভাটা পড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির। গত দুই সপ্তাহ ধরেই একটু একটু করে কমছে দেশী ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহেও পেঁয়াজের দাম কমেছে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে কাওরান বাজার, হাতিরপুল, মোহাম্মাদপুর ও শান্তিনগর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজের দাম কমার হার পাইকারিতেই বেশি। পাইকারিতে যে হারে দাম কমেছে খুচরা বাজারে তার খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
বাজারে গতকাল প্রতি কেজি মোটা চাল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় এবং সরু চাল ৫৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশী রসুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, আমদানি করা রসুন ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, চিনি ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১০০ থেকে ১২০ টাকা, আমদানি করা মসুর ডাল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গরুর গোশত ৫০০ থেকে ৫২০ এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাজারে গতকাল আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, সরপুঁটি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, কাতলা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাস ১২০ থেকে ২০০ টাকা, ট্যাংরা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিটি ইলিশ ৬০০ থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।