ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক আরো জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, আমি শুরুতেই অনুধাবন করেছি যে প্রতিবেশী দেশের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক স্থাপন বাঞ্ছনীয়।
মোদী বলেন, প্রতিবেশী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন হলে কথা বলতে হবে- আলোচনা করতে হবে। প্রয়োজনে পারস্পারিক সাক্ষাৎ ও সফর বিনিময়ও হতে হবে। এ জন্য আমাদের কোন প্রটোকলে আবদ্ধ থাকলে চলবে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীও কলকাতা থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে সবুজ পতাকা নেড়ে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর নয়াদিল্লীর কার্যালয় থেকে সবুজ পতাকা নেড়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ।
তাঁরা একই সাথে ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের মাঝে সংযোগ স্থাপনকারী ভৈরব ও তিতাস নদীর ওপর নির্মিত দুটি রেল সেতু এবং ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের উভয় প্রান্তের বহির্গমন ও কাস্টমস কার্যক্রমও উদ্বোধন করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী কানেকটিভি জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, কানেকটিভিটি নিয়ে আমরা যখন আলোচনা করি তখন আমার ১৯৬৫ সালের পূর্বেকার দু’দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার কথা মনে পড়ে যায়।
আমি খুবই আনন্দিত যে, আমরা ওই যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনর্জ্জীবনে এক পা দু’পা করে এগিয়ে যাচ্ছি।তিনি বলেন, কানেকটিভিকে জোরদার করার প্রকৃষ্ট মাধ্যম হচ্ছে ‘পিপল টু পিপল’ কানেকটিভি। আজ আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের উদ্বোধনে কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেসের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হলো।
এতে ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস সুবিধার পাশাপাশি ভ্রমণের সময়ও ৩ ঘন্টা সাশ্রয় হবে। মৈত্রী এবং বন্ধন এই দুটি রেলের নামও আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কেরই অনুরূপ।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে একজন বিশ্বস্ত সহযোগী হওয়া ভারতের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈাতক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর এমপি গণভবন প্রান্তে এবং দ্বিতীয় ভৈরব সেতু এলাকায় অবস্থানরত রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী, বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা, এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নজিবুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদী বাংলায় বলেন, ‘আজ এই শুভক্ষণে দুই দেশের জনগণকে আমার অভিনন্দন জানাই। আজ আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরো দৃঢ় হলো। ’
তিনি উভয় দেশের জনগণকে দুর্গাপূজা, কালীপূজা এবং দিওয়ালীর শুভেচ্ছা জানিয়ে সবার কল্যাণ কামনা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ও তাঁর দেশের সোয়াশো কোটি জনগণের পক্ষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা করে বলেন, আপনার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পুনরায় সাক্ষাতের সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত।
তিনি বলেন, উন্নয়ন এবং যোগাযোগ (ডেভেলপমেন্ট এন্ড কানেকটিভিটি) এ দু’টি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিশেষ করে পশ্চিম বাংলাসহ আমাদের দু’দেশের মাঝে শতাব্দী প্রাচীন যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে তা আরো সুদৃঢ় করার জন্য আজ আমি আরো কয়েক পা আগে এগিয়ে গেলাম।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আপনার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি পুনরায় বঙ্গবন্ধুর কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
দু’দেশের মৈত্রী এবং বন্ধনের গতি দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাবে বলেও মোদী আশা প্রকাশ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানাজী তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে আশা প্রকাশ করেন, দুই দেশের মৈত্রী, দুই দেশের সংস্কৃতি, দুই দেশের ঐক্য, দুই দেশের সম্প্রীতি, দুই দেশের সংহতি ও ভাষার বন্ধন আরো সুদৃঢ় হবে।
আজকের দিনটিকে দু’দেশের জন্যই ঐতিহাসিক হিসেবে উল্লেখ করে মমতা বলেন, বাংলাদেশে দুটি রেল সেতু উদ্বোধন এবং বন্ধন ও মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা উভয় দেশের জন্যই কল্যাণকর হবে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমল থেকেই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক খুব ভালো এবং সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ ভারতের অন্যতম নির্ভরযোগ্য বন্ধু।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সুবিধাজনক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ সফরের আমন্ত্রণ জানান।