শিশু দত্তকের অবৈধ ব্যবসা!
শিশু দত্তকের অবৈধ ব্যবসা নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রী। আশি এবং নব্বেইয়ের দশকে দেশটিতে যে অবৈধ শিশু ব্যবসা গড়ে উঠেছিলো, তাকে ‘মানবতা বিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ইউরোপে দত্তক হিসেবে পাড়ি জমানো শিশুদের শেকড়ের খোঁজে সহায়তা করতে ডিএনএ ব্যাঙ্ক গঠন করবেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে।
সম্প্রতি ডাচ প্রামাণ্যচিত্র জেম্বলার এক পর্বে উঠে এসেছে শ্রীলঙ্কায় আশি এবং নব্বইয়ের দশকে অবৈধ শিশু ব্যবসার ভয়ঙ্কর চিত্র। ওই সময়ে ১১ হাজারের বেশি শিশুকে ইওরোপের বিভিন্ন দেশে দত্তক হিসেবে পাঠানো হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষকেই ব্যবসায়ীদের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে ভূয়া তথ্য।
চার হাজারেরও বেশি শিশুকে বিক্রি করা হয়েছে নেদারল্যান্ডসে। বাকিদের পাঠানো হয়েছে সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানী এবং যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে। এই শিশুদের অনেকেরই জন্ম শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অবৈধ ‘শিশু খামারে’। ১৯৮৭ সালে এরকমই এক শিশু খামারে অভিযান চালিয়ে ২০ নবজাতককে উদ্ধার করার পর প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার অবৈধ শিশু ব্যবসার কথা গণমাধ্যমের নজরে আসে।
প্রথমদিকে এব্যাপারে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে রাজি না হলেও জেম্বলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এব্যাপারে কথা বলেছেন দেশটির স্বাস্থমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে। তিনি বলেন, “এটা খুবই অন্যায়। এটা মানবতাবিরোধী এবং এই পরিবারগুলোর জন্য বড় ধরণের অবিচার। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই তদন্ত চালানো হবে। আমি নিজেই এই তদন্তের ভার নেবো।”
স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করেছেন এই ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে জড়িত শ্রীলঙ্কার অনেক হাসপাতালও। হাসপাতাল থেকে যারা তাদের নবজাতকদের খুইয়েছেন, প্রসবের সময় তাদের জানানো হয়েছিলো তাদের সন্তান মারা গেছে। পশ্চিম শ্রীলঙ্কার মাটুগামা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
জেম্বলার প্রমাণ্যচিত্রের পর বিবিসির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে অবৈধ শিশু ব্যবসার কারণে সন্তানের পরিচয় খোয়ানো মায়েদের করুণ চিত্র। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার উপকূলবর্তী অঞ্চল নেগোম্বোতে হাজির হন সন্তানের পরিচয় খোয়ানো অনেক মা, যারা দারিদ্র ও সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলেন নিজের সন্তানদের।
এদের মধ্যে একজন রেনুকা আরেসিংহে বিবিসিকে বলেন, দারিদ্রের কারণে মাত্র ২০০০ রুপিতে ১৯৯২ সালে নিজের কণ্যা সন্তানকে বেচে দিয়েছিলেন তিনি। “আমি খুবিই খুশি হব তাকে আরেকবার দেখতে পেলে। আমি তাকে দত্তক দিয়েছিলাম কারণ আমরা ছিলাম ভীষণ গরীব এবং আমাদের আর কোনো উপায় ছিলো না,” বলেন তিনি।
“তারা বলেছিলো, আমার সন্তানকে তারা জার্মানি পাঠিয়েছে। কিন্তু এছাড়া আর কোনো তথ্য জানা নেই আমার,” দাবি করেন আবেসিংহে। কেবল শ্রিলঙ্কান মায়েরাই নন, প্রতারণার শিকার হয়েছে এই শিশুদের দত্তক নেওয়া ইউরোপীয় পরিবারগুলোও। অনেক ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণের সময় তাদের সামনে হাজির করা হয়েছে নকল মায়েদের।
জেম্বলার তথ্যচিত্রে উঠে এসেছে এইসব অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণেই ডাচ কাউন্সিল ফর দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস অ্যান্ড জুভেনাইল প্রোটেকশন ২০১৬তে দেশটির সরকারকে সুপারিশ করে বিদেশ থেকে দত্তক গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করার। ডাচ নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও বলেছেন এসব অভিযোগের প্রেক্ষীতে তদন্ত চালাবে তাদের সরকার।