৬ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
পুলিশকে ঘুষ না দেয়ায় মাদ্রাসা সুপারকে পিটিয়ে হত্যা : ভাই
এক লাখ টাকা ঘুষ না দেয়ায় আমার ভাই মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমানকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে- এ অভিযোগে সাতক্ষীরায় ৬ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত মামলাটি তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য পিবিআই খুলনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর আমলি আদালত ০১-এ মামলাটি করেছেন নিহত সাঈদুরের ভাই বজলুর রহমান। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নের কাথণ্ডা গ্রামের দেলদার রহমানের ছেলে। নিহত মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমান (৪৮) কলারোয়া উপজেলার বাকশা হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার। সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই পাইক দেলোয়ার হোসেন, এএসআই শেখ সুমন হাসান, এএসআই আশরাফুজ্জামান ও পুলিশের অজ্ঞাতনামা দুই কনস্টেবলকে মামলার আসামি করা হয়েছে। তারা সবাই সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত আছেন। আদালতের বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) খুলনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বিবরণে বলা হয়, মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমান ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতের খাওয়া শেষে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে পুলিশের ওই সদস্যরা মোটরসাইকেলে তার বাড়িতে যান। এ সময় তারা তাকে ডাকাডাকি করে ঘরের বাইরে আসতে বলেন। কিন্তু সাঈদুর রহমান তাদের জানান, আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা না দেখালে বাইরে আসব না। এ সময় পুলিশ দরজায় সজোরে লাথি মারতে থাকায় আতংকিত হয়ে তার স্ত্রী সাজেদা খাতুন দরজা খুলে দেন। পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বাইরে এনে উঠানে ফেলে নির্মমভাবে মারধর করতে থাকে। তার দেহের বিভিন্ন স্থানে লাথি মারে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশকে ৫০০০ টাকা দিয়ে তার মুক্তি চাইলে এসআই আসাদুজ্জামান এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তা দিতে অস্বীকার করায় ওই রাতেই তারা তাকে নিয়ে যায় সাতক্ষীরা থানায়। পরদিন তাকে মুক্ত করতে থানায় আসেন স্বজনরা। মামলায় বজলুর রহমান উল্লেখ করেন, এদিন দুপুরে থানার গারদরুমে রেখে হত্যার উদ্দেশে তাকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করতে থাকে। এতে তার পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মারধরে নিস্তেজ হয়ে পড়ার পর সাঈদুর রহমানকে বিকালে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় সাঈদুর রহমান তার স্বজনদের জানান, তার দাঁড়ানো অথবা বসার ক্ষমতা নেই। সারা শরীর ফুলে গেছে। পুলিশ তার তলপেটের ওপর দাঁড়িয়ে চাপ দিয়েছে। এতে তার বমি হচ্ছে। মামলার বাদী তার আরজিতে আরও উল্লেখ করেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি বলেন, রাতে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে কারা হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোরে হাসপাতালে তাকে দেখা যায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তার পায়ুপথ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মারধরের কারণে সমস্ত শরীর ফুলে উঠেছিল। কিছু সময় পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের জানান তিনি মারা গেছেন। মামলার বাদী বজলুর রহমান জানান, তার ভাই সাঈদুর রহমান একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। এলাকায় একজন সৎ লোক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। বাদী বজলুর রহমান বলেন, পুলিশ তার ভাইকে ‘সাপের মতো’ পিটিয়ে হত্যা করেছে। তিনি এ হত্যার বিচার দাবি করেছেন। মামলায় সাতজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তারা হলেন নিহতের স্ত্রী সাজেদা খাতুন, ভাই সফিকুল ইসলাম ও হাবুবুর রহমান, মুজাহিদ, সাইফুদ্দিন, মেহের আলি বিশ্বাস ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার। মামলা সম্পর্কে এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, তাকে মারধর করে হত্যার অভিযোগ সত্য নয়। তার কাছে ঘুষের টাকাও চাওয়া হয়নি। নাশকতার দুটি মামলায় তাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জানান, এ ব্যাপারে আদালতে মামলা হয়েছে শুনেছি। তবে কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি। একই কথা বলেন মামলার আরেক আসামি এএসআই শেখ সুমন হাসান।
Share!