প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রায় ৪০ বছর ধরে দফায় দফায় রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিতে হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চালাতে হচ্ছে শরণার্থী প্রত্যাবাসনের কূটনৈতিক আলোচনাও। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে আবারো মুখোমুখি হতে হয়েছে কয়েক লাখ শরণার্থী সমস্যার।
স্বাভাবিকভাবেই মিয়ানমারের সঙ্গে পারস্পারিক সম্পর্কের অবনতি হওয়ার পর আন্তর্জাতিক চাপ জোরদারে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশের অভ্যন্তরে যাতে শরণার্থীরা ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেদিকেও নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ তাদের।
৩৯ বছর আগে ১৯৭৮ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপারেশন ড্রাগন নামে পরিচালিত এক অভিযানে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল বাংলাদেশে। দুই দেশের সফল কূটনৈতিক আলোচনায় পরে তাদের ফিরিয়ে নিয়েছিল মিয়ানমার।
১৯৯২ সালে আবারো সেনাবাহিনীর অভিযানে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে আসে। কূটনৈতিক তৎপরতায় তাদের প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে এখনো রয়ে গেছে ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ।
সবশেষ, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের পর লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর প্রতিবেশী এ দেশটির সঙ্গে অনেকটাই বদলেছে সরকারের পররাষ্ট্রনীতি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব) আব্দুর রশীদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্পর্কে বাংলাদেশ চারটি পলিসি ব্যবহার করেছ- প্রথম কৌশল হলো বাংলাদেশ মিয়ানমারের সাথে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এর সমাধান করতে চায়। দ্বিতীয় হচ্ছে আমাদের অঞ্চলে যে সব বিশিষ্ট দেশগুলো আছে সে গুলোকে জোটবদ্ধ করে বাংলাদেশের পাশে দাড় করানো। তৃতীয় হচ্ছে এটা গ্লোবাল ইস্যু তৈরি করা এবং রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে তাদেরকে পাশে পাওয়া। চতুর্থ হচ্ছে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়াকে অ্যাক্টিভিট করার মাধ্যমে সবাইকে জানানো।’
সরকারিভাবে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ জমির । তিনি আরো বলেন, ‘এবারে রোহিঙ্গা শরণার্থী মধ্যে শুধু মুসলমানর আসেন নাই। হিন্দুরাও এসেছেন। তার সঙ্গে খৃস্টান সম্প্রদায়ের লোকও এসেছে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরও দেশে ফিরে যেতে হবে।’
মোহাম্মদ জমির আরো বলেন, ‘আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীনের কোন ভিন্ন মত থাকলে তারা যে জানায়, কিন্তু যেন ভিন্ন মত পোষণ না করে। মিয়ানমার সরকার মানবাধিকার করছে। আমাদের সরকার থেকে আরো জোরালো ভাবে বিষয়টি মোকাবেলা করতে।’ এবং এদের দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।
এছাড়াও বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে রোহিঙ্গারা যাতে দেশের ভেতরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য নজরদারি বাড়ানোরও পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।