Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

হিটলারের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুকুপ – ‘গ্যাস চেম্বার’

হিটলারের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুকুপ – ‘গ্যাস চেম্বার’

মানুষকে মারার জন্য হিটলারের যে কয়টি যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি ছিল তার মধ্য ‘গ্যাস চেম্বার’ অন্যতম। যাদেরকে এ গ্যাস চেম্বারে নিয়ে আসা হতো তারা দ্রুত ছটফট করে মৃত্যুর মুখে পতিত হতো, যা ছিল খুবই ভয়াবহ ও নৃশংস। জার্মানির সামরিক শক্তি সম্পর্কে ইউরোপের অন্য সব দেশের সঠিক ধারণার যে অভাব ছিল তার সুযোগ পুরোপুরি গ্রহণ করেছিলেন হিটলার। বিশ্বজয়ের স্বপ্নে পাগল হয়ে ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ সালে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং এ দিনটি থেকেই শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। মাত্র পনেরো দিনে জার্মান বাহিনী পোল্যান্ডের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে পোল্যান্ড অধিকার করে।
তারপর শুরু হয় জার্মান বাহিনীর অগ্রযাত্রা। পোল্যান্ডের পর হিটলার নরওয়ে ও ডেনমার্ক দখল করেন। নরওয়েতে বিরাট সংখ্যক ব্রিটিশ সৈন্য অবস্থান করছিল। তাদের অধিকাংশই নিহত হয়। এ ঘটনায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলিন পদত্যাগ করেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন উইনস্টন চার্চিল। এরপর হিটলার দৃষ্টি ফেরান ফ্রান্সের দিকে। ফ্রান্স ইউরোপের সর্বপ্রধান শক্তি। ফ্রান্স নিজেদের সুরক্ষার জন্য জার্মান সীমান্তে দুর্ভেদ্য আবহ সৃষ্টি করেছিল। যাকে বলা হতো ম্যাজিনো। বেলজিয়াম আক্রমণ করে সেই দেশের মধ্য দিয়ে ফ্রান্সের সীমান্ত প্রদেশে গিয়ে উপস্থিত হয়। তুমুল যুদ্ধের পর অবশেষে ফরাসি বাহিনী পরাজিত হয়। ফরাসিদের এ বিপর্যয়ের সুবিধা নেয়ার জন্য ইতালি নিজেকে জার্মানদের মিত্রপক্ষ হিসেবে ঘোষণা করে যুদ্ধে যোগ দেয়। ফলে সমস্ত ইউরোপ-আফ্রিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ আগুন। ইতালির রাষ্ট্রপ্রধান মুসোলিনি উত্তর আফ্রিকা অধিকার করার জন্য বিরাট সৈন্যদল পাঠান। অন্যদিকে হিটলার ফ্রান্স অধিকার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। হিটলার অনুগত ফ্যাসিস্ট শক্তি নতুন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মার্শাল পেত্যাকে নিযুক্ত করেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মার্শাল বিনাযুদ্ধেই হিটলারের কাছে আত্মসমর্পণ করেনন। ফ্রান্স জয়ের পর জার্মানি যুগোস্লাভিয়া আর গ্রিস দেশ দখল করে। ইতোমধ্যে রুমানিয়া, বুলগেরিয়া ও হাঙ্গেরি জার্মানির পক্ষে যোগ দেয়। এর ফলে সমগ্র দক্ষিণ ইউরোপ জার্মানির নিয়ন্ত্রণে এসে যায়। এদিকে যখন জার্মান বাহিনী বীরদর্পে একের পর এক দেশ অধিকার করে এগিয়ে চলেছে, অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরে হিটলার শুরু করেন নারকীয় ইহুদি নিধনযজ্ঞ। পৃথিবীর ইতিহাসে এ নৃশংসতার কোনো তুলনা নেই। হিটলার চেয়েছিলেন জার্মানি থেকে ইহুদিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে। ফলে হাজার হাজার ইহুদিকে বন্দি করা হয়। তাদের বলা হতো তোমাদের জার্মানির বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। তাদের গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো জনবসতিহীন সীমান্ত অঞ্চলে। এখানে তাদের জন্য অস্থায়ী বন্দিনিবাস তৈরি করা হয়েছিল। যাকে বলা হতো ঘেট্রো। এখানে কোনো খাবার ছিল না, পানি ছিল না, তার ওপরে ছিল হিটলারের বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। অল্পদিনের মধ্যেই বেশির ভাগ মানুষই মারা পড়ত। যারা বেঁচে থাকত তাদের গুলি করে হত্যা করা হতো। নাৎসি বাহিনীর হাতে নারী-শিশু, বৃদ্ধ কারো নিস্তার ছিল না। হাজার হাজার ইহুদিকে হত্যা করতে যে বিরাট পরিমাণ গুলি খরচ হতো তাতে জার্মান কর্তৃপক্ষ চিন্তিত হয়ে পড়ে। ফলে হিটলারের আদেশে তৈরি হয় গ্যাস চেম্বার। একটি বড় ঘর। চারদিকে বন্ধ। একসঙ্গে দুইশ মানুষকে সেই ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ছাড়া হতো। কয়েক মিনিটের মধ্যে সেই বিষাক্ত গ্যাসে মারা পড়ত সবাই। তাদের মৃতদেহগুলো সীমান্ত অঞ্চলে বিরাট বিরাট গর্তে ছুড়ে ফেলে দেয়া হতো। তিন বছরে হিটলার প্রায় ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিল। ইহুদিদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর ঘৃণাই তাকে এই হত্যাকাণ্ডে প্ররোচিত করেছিল। মানুষকে মারার যে কয়টি যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে গ্যাস চেম্বার অন্যতম। যাদেরকে এ গ্যাস চেম্বারে নিয়ে আসা হয় তারা অনেকটা ছটফট করে মৃত্যুর মুখে পতিত হন। ১৯২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাভাদা অঙ্গরাজ্যে এ পদ্ধতি প্রথম প্রয়োগ করা হয়। মূলত মানুষ হত্যার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির নাৎসি বাহিনী এ গ্যাস ব্যাপক আকারে ব্যবহার করে। জার্মানি থেকে ইহুদি নিধনে হিটলার বাহিনী এ পদ্ধতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করেছে। বিশালাকৃতির একটি চিমনিতে ঢুকিয়ে ২ হাজার ৫০০ মানুষকে একত্রে হত্যা করেন বলে ইতিহাসের পাতায় তার প্রমাণ রয়েছে। হিটলারের কারণেই এ পদ্ধতি ব্যাপক পরিচিত লাভ পায়। গ্যাস চেম্বারটি দেখতে সিলিন্ডার আকৃতির একটি ছোট্ট কক্ষের মতো। বাইরের বাতাস ভেতরে কিংবা ভেতরের বাতাস বাইরে আসতে পারে না। চারদিকে স্থানে স্থানে কাচের জানালা বসানো থাকে, যাতে বাইরে বসে ভেতরের মানুষটির মৃত্যুদশা দেখা যায়। সিলিন্ডারের বাইরে একটি দড়ি টানানো থাকে, দড়িতে টান দিলে ভেতরে এমনভাবে বসানো পটাসিয়াম সায়ানাইডের ট্যাবলেটটি নিচে রক্ষিত সালফিউরিক এসিডের বাটিতে পড়ে যায়। সালফিউরিক এসিড ট্যাবলেটের বাইরের আবরণী ধ্বংস করে দেয় এবং আস্তে আস্তে সায়ানাইড গ্যাস নির্গত হতে থাকে। অক্সিজেনের অভাবে বুক ফুলে ওঠে। চোখ দুটি কোটর থেকে বেরিয়ে আসে। দেখতে অনেকটা ভয়ানক ও বীভৎস হয়ে ওঠে তার চেহারা। শেষ পর্যন্ত চেম্বারের পাটাতনের ওপর ভয়ানকভাবে আছড়াতে থাকে এক পর্যায়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে যায়। এমনি একটি গ্যাস চেম্বারের মানুষ মারার শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করেছে বৃটিশ দৈনিক দি ডেইলি মেইল। তারা বলছে, তারা বলছে হিটলার মূলত ভি-১ গ্যাস দিয়ে মানুষ মারত। এখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় এটি আধুনিকায়ন করা হয়। মানুষটিকে একটি বিছানায় শুইয়ে হাত, পা, মাথা, কোমর, হাঁটু ইত্যাদি শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়। এরপর ঠিক আগের পদ্ধতিতেই গ্যাস ছাড়া হয়, এতে মানুষটি আর নড়াচড়া করতে পারে না এবং ওই বিছানাতেই মারা যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই মৃত্যু পদ্ধতি নিয়ে অনেক আলোচনা ও বির্তক করা হয় অবশেষে এ পদ্ধতিতে মানুষকে মারা নিষিদ্ধ করা হয়। এই গ্যাস চেম্বার আবার অলোচনায় আসে সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ায় আসাদ সরকার তা ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ আনে পশ্চিমা গনমাধ্যম।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top