আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ ‘এসআই আমাকে ধর্ষণ করেন, অভিযোগ নেননি ওসি’
‘আমার মরে যাওয়ার একমাত্র কারণ এসআই মোহাম্মদ মিজানুল ইসলাম আমাকে ধর্ষণ করেন। ১৭/০৩/১৭ ইং রাত ২.০০ ঘটিকায়। আমার অভিযোগ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গ্রহণ করেন না।
সোমবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে গ্রহণ না করা জিডির কপি এবং ‘হালিমার ডায়েরির’ দুটি পৃষ্ঠা তিনি সাংবাদিকদের দেখান কনস্টেবল হালিমা খাতুনের বাবা হেলাল উদ্দিন আকন্দ । হালিমার বাবা দাবি করেন, এসআইয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে জিডি করতে চাইলেও থানার ওসি তা গ্রহণ করেননি। হালিমা নিজেই আত্মহত্যার আগে সে কথা ডায়েরিতে লিখে রেখে গেছেন বলে বাবার ভাষ্য। এসময় তিনি ‘হালিমার লেখা দিনলিপি’ (ডায়েরি) ও ওসির কাছে করা ধর্ষণের শিকার হওয়ার ‘লিখিত অভিযোগ’ গণমাধ্যমের কর্মীদের দেখান। ওসির কাছে ‘লিখিত অভিযোগে’ হালিমা উল্লেখ করেন, মিজানুল তাকে নানা সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় মিজানুল তার ক্ষতি করার হুমকি দেন। ১৭ মার্চ দিবাগত রাত দুইটার দিকে মিজানুল হত্যার হুমকি দিয়ে ব্যারাকে হালিমাকে তার কক্ষে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি একই থানার এসআই রিপন জানতেন। রিপন বিষয়টি চেপে যেতে বলেন। ওসির কাছে এ ঘটনায় অভিযোগ দিতে হালিমাকে পরামর্শ দেন। লিখিত বক্তব্যে হালিমার বাবা বলেন, `এসআই রিপন, এসআই খালেকুজ্জামান, এসআই হাসান এবং তার সঙ্গীরা ঘটনা শুনে হালিমাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করেন। বিষয়টি হালিমা ওসিকে জানালেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হালিমার বাবা হেলাল উদ্দিন আকন্দ বলেন, ‘আমার মেয়ের মৃত্যুর পর ৬ এপ্রিল গৌরীপুর থানার ব্যারাক থেকে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিই। সেখানে তার একটি ডায়েরি (দিনলিপি) পাওয়া যায়। তাতে হালিমা নিজের হাতে ওই সব কথা লিখে গেছে। এসময় তিনি বলেন, একে তো হালিমা নিজ ব্যারাকে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, তার ওপর সহকর্মীরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করেছেন—এত অপমান সহ্য করতে পারেননি হালিমা। মেয়ের প্রতি এই অন্যায়ের তিনি দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। এসআই রিপন সরকার বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানতাম না। এসব অভিযোগ বানোয়াট। এ বিষয়ে ওসি দোলোয়ার বলেন, হালিমার মৃত্যুর আগে এসআই মিজানুল আমাকে জানিয়েছিলেন যে হালিমা তাকে বকাবকি করেন। হালিমাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি তা অস্বীকার করেছিলেন। আর এখন যেহেতু মামলা হয়েছে, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। উল্লেখ্য, ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার কনস্টেবল ২৫ বছর বয়সী হালিমা গত ২ এপ্রিল গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন আকন্দের দায়ের করা মামলায় এসআই মো. মিজানুল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন।