হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম
টাকার বিপরীতে হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। পণ্য আমদানির জন্য গতকাল গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা। যদিও আন্তঃব্যাংক ব্যাংকে এ দর ছিল ৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে কমতে তলানিতে নামছে। কমে যাচ্ছে রফতানি আয়। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমছে না।
একই সাথে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ করা হয়েছিল তার মেয়াদ শেষে পরিশোধ শুরু হয়েছে। সব মিলে বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাজারে ডলার ছাড়তে হবে, অন্যথায় আমদানি ব্যয় বেড়ে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
জানা গেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। আমদানি দায় পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনেন গ্রাহকেরা। সাধারণত আন্তঃব্যাংকের সাথে গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দামের পার্থক্য এক টাকার ওপরে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গতকাল গ্রাহক পর্যায়ের সাথে আন্তঃব্যাংকের ডলারের দামের পার্থক্য চার টাকার কাছাকাছি চলে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গতকাল দু’টি বিদেশী ব্যাংক গ্রাহক পর্যায়ে অর্থাৎ আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা দরে। আর স্থানীয় ব্যাংকগুলো আমদানি পর্যায়ে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮২ টাকা ৯০ পয়সা দরে। অথচ এক বছর আগে তা ছিল ৭৯ টাকা।
কেন ডলারের সঙ্কট : ব্যাংকাররা জানিয়েছেন অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেদারচ্ছে আসছে বিদেশী ঋণ। আগে শুধু রফতানিকারকরাই এ ঋণের সুবিধা পেতেন। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালা আরো শিথিল করে। এখন রফতানিকারকদের বাইরেও সার আমদানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধা নিচ্ছে। আমদানিকারকরা যখন বৈদেশিক ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করছে, তখন ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করত তা বাজারে উদ্বৃত্ত ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ইচ্ছামাফিক নিজেদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে পারে না। এ জন্য নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক দিন শেষে তার মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতে পারে। দিনশেষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে বাজারে বিক্রি করছে হবে। বাজারে বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মান ধরে রাখার জন্য গত কয়েক বছরে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনে রিজার্ভের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে দেড় শ’ কোটি ডলার আসত এখন তা ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। অন্য দিকে রফতানি আয়ও কমে গেছে। এ দিকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ নেয়া হয় সর্বোচ্চ ছয় মাস মেয়াদে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের ঋণ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এ ঋণও ধারাবাহিকভাবে মেয়াদ শেষে পরিশোধ শুরু হয়েছে।
সব মিলে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ না বেড়ে বরং কমে গেছে। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।