সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হয়েছে প্রায় দুই বছর হলো। এই সময়ে রাজধানীর অনেক স্থানেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। আবার কোথাও এখনো কোনো কাজই হয়নি। এলাকার সমস্যা, সম্ভাবনা, অভাব-অভিযোগ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে ওয়ার্ডের চালচিত্রশান্তিনগর, বিজয়নগর, কাকরাইল, পুরানা পল্টন লাইন ও নয়াপল্টনের প্রতিটি ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। এতে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া এই এলাকার প্রায় প্রতিটি সড়কে লেগে আছে তীব্র যানজট। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, গুলিস্তান, পুরানা পল্টন ও মতিঝিলের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা এই এলাকাগুলোতে হকারদের চাপ বেড়েছে।এই এলাকাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। চামেলীবাগ, আমিনবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পুরানা পল্টন, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম, বিজয়নগর, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন লাইন, ট্রাফিক পুলিশ ব্যারাক, পুলিশ হাসপাতাল, কাকরাইল, কালভার্ট রোড, শান্তিনগর, শান্তিনগর বাজার এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এসব এলাকায় তিন লক্ষাধিক লোকের বাস।গতকাল বুধবার এই এলাকাগুলো ঘুরে ও স্থানীয় বাসিন্দা এবং জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই ওয়ার্ডে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার মাঠ ও পার্ক নেই। এ ছাড়া এই এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা, মাদক, মশার উপদ্রব, চুরি-ছিনতাই, ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধ, গলি সড়ক খানাখন্দ ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। সরেজমিনে দেখা যায়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণির প্রায় দক্ষিণ সীমানা থেকে কাকরাইল মোড়, কালভার্ট রোড, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, চামেলীবাগ, আমিনবাগ ও বিজয়নগর এলাকার প্রধান সড়কের ফুটপাত ও গলিতে হরেক রকমের দুই শতাধিক অস্থায়ী অবৈধ দোকানপাট রয়েছে। এসব দোকানে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। দোকানের ময়লা-আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে রয়েছে। বাতাসে উড়ছে ধুলাবালি। এতে পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকাতেই সড়ক দিয়ে পথচারীদের চলতে দেখা গেছে। কালভার্ট রোডের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, গত ১৫ জানুয়ারি থেকে কর্মদিবসে গুলিস্তান, পুরানা পল্টন মোড়, বায়তুল মোকাররম, দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার ফুটপাত হকারমুক্ত করতে টানা অভিযান চালাচ্ছে ডিএসসিসি। ফলে ওই এলাকায় বসতে না পেরে কালভার্ট রোডসহ আশপাশের এলাকার ফুটপাত দখল করছেন হকাররা। এতে আগের মতো ফুটপাতে পথচারীরা চলাচল করতে পারছেন না। অবিলম্বে এই এলাকা থেকেও হকারদের উচ্ছেদ করতে হবে। দেখা যায়, শান্তিনগরের বীর উত্তম শামসুল আলম সড়ক ও রাজারবাগের আউটার সার্কুলার রোডে মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসেতুর দক্ষিণ ও পূর্ব অংশের নির্মাণকাজ চলছে। সড়কেও পয়োনিষ্কাশন লাইন নির্মাণের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। এতে খানাখন্দে ভরা সড়ক দুটিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এই পচা পানি থেকে বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাক-মুখ চেপে চলাচল করছেন পথচারীরা। এর মধ্যেই হেলেদুলে চলছে যাত্রীবাহী যানবাহন। এ ছাড়া এই দুটি সড়কে তীব্র যানজট দেখা গেছে। চামেলীবাগের বাসিন্দা তৌফিক রহমান বলেন, উড়ালসড়ক নির্মাণের নামে চার বছর ধরে এই দুটি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এতে বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে থাকে। এতে সড়কের খানাখন্দ বোঝা যায় না। ফলে রিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ ছাড়া এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের ভোগান্তি কয়েক গুণ বেড়েছে। বর্তমানে শান্তিনগরের মানুষ শান্তি খুঁজে বেড়াচ্ছে। একই এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ওই দুটি সড়ক দিয়ে ঢাকা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলের গণপরিবহনসহ গাজীপুর অঞ্চলের বাস চলাচল করে। অথচ সারা বছর এই দুটি সড়কে জলাবদ্ধতা লেগে রয়েছে। এই কারণেই সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। এই মৌসুমে বেশি বৃষ্টি হলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ তা সমাধানের কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। পুরানা পল্টন, শান্তিনগর ও চামেলীবাগের চারটি বাড়িতে ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে দুর্গন্ধের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আশপাশের অন্যান্য এলাকায়ও একই সমস্যা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। চামেলীবাগের বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় ওয়াসার পানি থেকে দুর্গন্ধ আসে। কয়েক মাসে ময়লা ও পোকামাকড়ও পাওয়া যেত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সড়কে তীব্র যানজট , জলাবদ্ধতা ও ফুটপাত দখল হকাররা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সড়কে তীব্র যানজট , জলাবদ্ধতা ও ফুটপাত দখল হকাররা।
Share!