আগামী সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোটে চাইলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভোট চেয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের দোয়া চাই, ভালোবাসা চাই। আগামী নির্বাচনের জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই।’আজ মঙ্গলবার বিকেলে মাগুরায় মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী মাগুরায় ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।এর আগে বগুড়া ও লক্ষ্মীপুরে গিয়েও দলের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চেয়েছেন শেখ হাসিনা।আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়। মানুষ পেট ভরে খেতে পারে। ’৭০ সালে জনগণ আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করেছিল। আর সে জন্যই আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।’আওয়ামী লীগ উন্নয়ন করতে ক্ষমতায় আসে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগই জাতির পিতার নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিলেন। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি সব ব্যথা বুকে নিয়ে আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার পিতা স্বাধীনতা এনেছিলেন। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমি বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। আর যখনই আমরা উন্নয়ন করতে চাই, দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, একটি শ্রেণি বাধা দেয়।’প্রয়োজনে জীবন দিয়েও বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করে যাব
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মাগুরায় ১৯৯৪ সালে ২০ মার্চ উপনির্বাচনে বিএনপি ন্যক্কারজনকভাবে ভোট চুরি করে ছিল। শুধু মাগুরা নয়, সমগ্র দেশে তারা ত্রাস ও দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল না, তখন দেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রয়োজনে জীবন দিয়েও এই বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে যাব। সেটাই আমার প্রতিজ্ঞা।’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই দেশকে উন্নত করা। কিন্তু বিএনপি কী করেছে? ২০০১ সালের নির্বাচনের পর তারা এখানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আওয়ামী লীগের একজন নেতা-কর্মীও সে সময় ঘরে থাকতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় আসা মানে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করা। তারা ক্ষমতায় আসা মানেই জনগণের জীবনে নাভিশ্বাস ওঠা।’সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করেছিল। প্রত্যেকটি মসজিদের ইমাম, ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক, ওলামা মাশায়েখ ও সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের কাছে আমার আহ্বান থাকবে, আপনারা নিজেরা নিজ নিজ এলাকায় লক্ষ রাখবেন, কারও ছেলেমেয়েই যেন ওই জঙ্গিবাদের পথে না যায়।’মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তানজেল হোসেন খানের সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুমার কুণ্ডুর পরিচালনায় জনসভায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব উল আলম হানিফ, আবদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।প্রধানমন্ত্রী মাগুরার ১৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৯টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। জনসভা মঞ্চের পাশে স্থাপন করা প্রকল্পগুলোর ফলক উন্মোচন করেন তিনি।১৫০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পগুলো হলো মাগুরা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, মাগুরা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল, শ্রীপুর ও মহম্মদপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, সদরের আন্দোলবাড়িয়া সড়কে ফটকি নদীর ওপর ১০০.১০ মিটার সেতু, সদরের কাটাখালী-ইছাখাদা ৯.৭১ কিলোমিটার সড়ক, নতুন বাজারে নবগঙ্গা নদীর ওপর ৩০.৫০ মিটার সেতু, ৩৫০ ঘনমিটার প্রতি ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আছাদুজ্জামান স্টেডিয়াম, সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের প্রশাসনিক ভবন, সদর উপজেলার বেলনগর এলাকায় আঞ্চলিক হাঁস প্রজনন খামার (তৃতীয় পর্যায়), আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ ভবন ও অতিথিশালা, মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও ৫০ শয্যার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন।প্রধানমন্ত্রী ১৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে নয়টি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে রয়েছে মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, শালিখায় নালিয়া ঘাটে ফটকি নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, শালিখার আটিরভিটা-বরইচারা বাজার সড়কে ফটকি নদীর ওপর ৬৬ মিটার সেতু নির্মাণ, শালিখার বাউলিয়া-শরশুনা সড়কে চিত্রা নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, জাতীয় মহাসড়কের (এন-৭) মাগুরা শহর অংশ চার লেনে উন্নীতকরণ, মাগুরা পৌরসভার তৃতীয় নগর পরিচালনা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়), মাগুরা স্টেডিয়ামের পাশে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার এবং শ্রীপুর ও শালিখা উপজেলা মিনি স্টেডিয়াম।