Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

মাছরাঙার সুন্দরবন হুমকির সম্মুখীন

মোংলা থেকে যাত্রা করে পশুর নদ পেরিয়ে কুঙ্গা নদী। কুঙ্গা নদী তিনকোনা দ্বীপের কাছে যেখানে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে কোকিলমণির দিকে গেছে, সেই পয়েন্ট দিয়ে কিছুটা ভেতরে ঢুকতেই মরা পশুর নদ, খেজুরবাড়ি খাল, কাগাবগা খাল ও জাফা গাঙের মোহনা। পরপর দুই রাত চমৎকার এই মোহনায় আমাদের লঞ্চ নোঙর করল। এমন সুন্দর জায়গা সুন্দরবন ছাড়া আর কোথাও আছে কি না, জানা নেই। দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মোহনা থেকে বের হয়ে মরা পশুর নদ দিয়ে কিছুক্ষণ এগিয়ে একটি খালের সামনে লঞ্চ নোঙর করল। লঞ্চ থেকে আমরা ছয়জন ডিিঙতে উঠে বাঁ দিকের একটি সরু খালে ঢুকলাম। সুন্দর এই খালের নাম ক্ষেতখেরা।
খালে ঢোকার মুখেই নানা ধরনের মাছরাঙা দেখলাম। এ দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম থোরমোচা মাছরাঙার দেখাও মিলল এখানে। এরা ইংরেজিতে Brown-winged Kingfisher নামে পরিচিত। Alcedinidae পরিবারের মাছরাঙাটির বৈজ্ঞানিক নাম pelargopsis amauroptera.
ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যে থোরমোচা ৩৬ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৬ সেমি ও ওজন ১৬২ গ্রাম (পুরুষ)। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা, ঘাড়, গলা, বুক, পেট ও লেজের তলা কমলা-বাদামি। পিঠ ও কোমর নীল। ডানা ও কাঁধ-ঢাকনি কালচে-বাদামি, তবে ডানার কিনারার পালকগুলো গাঢ় বাদামি। চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইটের মতো লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহে কমলার আধিক্য বেশি। ডানার পালক-ঢাকনি ও কাঁধ-ঢাকনির কিনারা ফিকে। দেহতল কালো, ঘাড়ে কালো ডোরা রয়েছে।
থোরমোচা সচরাচর দৃশ্যমান আবাসিক পাখি হলেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় লোনাজলের বন ও সুন্দরবন ছাড়া দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। কিন্তু দিনে দিনে সুন্দরবন বিপন্ন হওয়ার কারণে এদের আবাস এলাকা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ছে। আর সে কারণেই সম্প্রতি এদের IUCN বাংলাদেশ সংকটাপন্ন (Vunerable) বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সুন্দরবন এবং মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল পর্যন্ত এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে বিশ্বে এরা প্রায়-বিপদগ্রস্ত (Near Threatened) বলে বিবেচিত।
পানির সামান্য ওপর দিয়ে দ্রুত উড়ে চলে। সচরাচর নদী-খালপাড়ের গাছের নিচু ডালে বসে পানিতে মাছ খোঁজে ও মাছ দেখলে দ্রুত পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার করে। মূল খাদ্য ছোট মাছ হলেও কাঁকড়া ও জলজ পোকমাকড় খেতে পারে।
এরা মার্চ-এপ্রিলে প্রজনন করে। এ সময় নদী-খালের খাড়া পাড়ে ৩০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা ও ১০ সেন্টিমিটার চওড়া সুড়ঙ্গ তৈরি করে বাসা বানায় এবং তাতে চারটি গোলাকার সাদা ডিম পাড়ে। এরা ৫-৬ বছর বাঁচে।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top