Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

সহিংসতা নারীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে

নারীর কারণে একটি সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়, একটি সুন্দর জীবনের সূচনা হয়। অথচ নারী এ সমাজে শুধুই একজন সামান্য নারী হিসেবে চিহ্নিত, মায়ের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ সমানাধিকারী। কিন্তু এ অধিকার নারীরা কতটুকু পান? তারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পুরুষশাসিত এ সমাজে নারীদের কোনো কার্যক্রমই গ্রহণযোগ্যতা পায় না। অথচ আমাদের জাতীয়পর্যায়ে শীর্ষ পদে থেকে বিগত দুই দশক ধরে নারীরা দেশ পরিচালনা করছেন। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের মূল হোতা আরেকজন নারী। যেমন- যৌতুকের জন্য বিয়ের পর সর্বপ্রথম শাশুড়ি-ননদের কাছেই অনেক সময় তারা নিগৃহীত হয়। এ ছাড়া গৃহকর্ত্রীর কাছে গৃহকর্মী নির্যাতনের কথা সবাই জ্ঞাত। পশুস্বভাবের কিছু পুরুষ কারণে-অকারণে স্ত্রীকে বেদম প্রহার করছেন। কখনো বা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে প্রতিশোধ নিতে মেয়েদের মুখে এসিড মারতেও দ্বিধা করছে না। কারো ভালোবাসার ডাকে সাড়া না দিলেও নারীকে হতে হচ্ছে লাঞ্ছিত। স্কুল-কলেজগামী মেয়েরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে ব্যক্তি থেকে সমাজ, প্রাতিষ্ঠানিক ও রাষ্ট্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নিজে নির্যাতন থেকে দূরে থাকলেই চলবে না, সেই সাথে আমাদের আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো নির্যাতনেরই প্রতিবাদ করতে হবে। সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন সচেতন নারীরা এবং তারা ক্রামগত আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এ আন্দোলনের সাথে সচেতন পুরুষেরাও এগিয়ে এসেছেন। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে তা অনেক কম। একটা সময় ছিল নারীকে নির্যাতন করা যে অপরাধের পর্যায় পড়ে, সেটা অনেকেই জানত না। তখন নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ ছিল না বা নির্যাতনের কথা জানানোর কোনো জায়গা ছিল না। এখন গণমাধ্যমের সুবাদে মানুষ এ বিষয়গুলো সহজে জানতে পারছে। যদিও এ সংখ্যা অনেক কম। নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য আমাদের শিক্ষা কারিকুলামের পাশাপাশি অতিরিক্ত ইস্যুগুলো মুক্ত করতে হবে। আমাদের ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, যানবাহনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী কোনো-না-কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এসব সহিংসতা নারীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। হামেশাই নারী শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হন। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য অর্থাৎ নারীর সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করা, সহিংসতা যে একটি গুরুতর অপরাধ, তা বোঝানো খুব জরুরি।নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশে ১৯৮৫ সালে পারিবারিক আদালত, ১৯৯৫ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ ও ২০০৩ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, হাইকোর্ট নির্দেশিত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা ২০০৮ পাস হয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু আইন করেই বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য চাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও ধর্মীয় শিক্ষার অভাবেই এমনটি হচ্ছে বলে মনে করেন সামজবিজ্ঞানীরা। নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার ও রাষ্ট্রকে অধিকতর আন্তরিক হতে হবে। এ ক্ষেত্রে সাধারণ নিরাপত্তা জোরদার করাটা জরুরি। সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা ও বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনা প্রয়োজন। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ব্যক্তি ও পরিবার থেকে কাজ শুরু করতে হবে। ব্যক্তি, পরিবার ও তারপর সমাজ। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে এভাবেই এগোতে হবে। তা না হলে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়বে। কারণ বাংলাদেশের নারীরা দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে নারীদের অবদান অনেক। গার্মেন্ট, কৃষি, কলকারখানা ও কুটির শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ এবং সফলতা প্রশংসনীয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে। সেই দেশে নারী তার প্রাপ্য সম্মান, মর্যাদা, অধিকার থেকে কেন বঞ্চিত হচ্ছে? কবে নারী তার প্রাপ্য অধিকার পাবে- সে দিনের অপেক্ষায় আছে নারীসমাজ।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top