প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘দেশ এভাবে এগিয়ে যাবে, এটা অনেকে মেনে নিতে পারে না। আমাদের শত্রু বাইরের নয়, ঘরের শত্রুই বিভীষণ।’ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।বিগত সময়ে সহিংস আন্দোলন ও জঙ্গিবাদ সমস্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এ ধরনের চ্যালেঞ্জ আরও মোকাবিলা করতে হবে। আমার সবসময় চিন্তা হয়, যখনই বাংলাদেশের মানুষ ভালো থাকে, স্বস্তিতে থাকে, উন্নতি হয়, তখনই যেন ষড়যন্ত্র আরও বেশি শুরু হয়। তারা ২০১৩, ১৪, ১৫-এর মতো আবারও কিছু করবে না_ এই আশঙ্কা থেকেই যায়। আবার তারা আঘাত করবে বা চেষ্টা করবে।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশ প্রশংসিত হচ্ছে। কিন্তু ওই প্রশংসা শুনে মন গলা_ এটা আমার স্বভাব নয়। সেখানে সন্দেহের কিছু আছে কি না, এটা আমাদের দেখতে হবে। ১৯৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় থেকে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছে, তাদের কাছে ক্ষমতাটাই সব। দেশ গোল্লায় যাক। কীভাবে দেশের ক্ষতি করবে, সেই চিন্তায় তারা থাকে।’জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘হলি আর্টিজানের ঘটনারপর কোনো এক দেশের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ছিল_ এ ঘটনা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েছিল। কিন্তু আমরা সেটা পারলাম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে। তাতে মনে হলো, কেউ কেউ খুশি হতে পারল না। এ রকম হবে, আমরা তাদের কাছে আকুতি করব, অমুকের কাছে চাইব, এটা চাইব। কিন্তু আমরা বাঙালি, এখনও তারা চিনতে পারেনি যে আমরা পারি।’ হলি আর্টিজানে নিহত পুলিশ সদস্যদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুজন পুলিশ জীবন দিয়ে গেছেন। কিন্তু তারা অনেকগুলো মানুষকে বাঁচিয়ে গেছেন, দেশের সম্মান বাঁচিয়ে গেছেন। এটা হচ্ছে কর্তব্যবোধ যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েও আপনারা দায়িত্ব পালন করেছেন।’ আইনশৃঙ্খলা যেন সুন্দর থাকে, সেদিকে নজর দিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।সন্ত্রাস, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে জনগণকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ মূল শক্তি। জনগণের মাঝে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি।’ তিনি আরও বলেন, মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কোমলমতি শিশুদের এখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে।গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সরকারদলীয় সাংসদ মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকা-ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে এভাবে মৃত্যুবরণ করতে হবে, এটা কখনও গ্রহণযোগ্য না। প্রতিটি এলাকায় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে হবে।’সাংসদ মনজুরুল ইসলাম হত্যাকা-ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সোচ্চার না হওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটখাটো ঘটনা হলেই দেখি হাউকাউ শুরু হয়ে যায়। একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার পর কোনো মানবাধিকার সংগঠন বা কেউ এ ব্যাপারে কোনো শব্দ করে না। যারা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষকে হত্যা করল, মসজিদে আগুন দিল, মানুষ পোড়াল, তাদের বিরুদ্ধে অত বেশি সোচ্চার হতে দেখি না।’গাইবান্ধায় সাংসদ হত্যাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার বাসা থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কেন পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়া হলো? তার বিরুদ্ধে একটা অপবাদ দিয়ে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র তার কাছ থেকে নিয়ে যাওয়া হলো। মনে হলো একেবারে পরিকল্পিতভাবে ছেলেটাকে মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেয়া হলো।’শেখ হাসিনা বলেন, ‘গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ থেকে শুরু করে সাঘাটা_ এসবএলাকায় ২০১৩ সালে চারজন পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, ফিশপ্লেট খুলে ফেলা হয়েছিল। এ ধরনের ঘটনা যেখানে ঘটেছিল, সেখানে একজন সংসদ সদস্যের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে কোন পত্রিকায় কী লিখল, সেটা দেখে, সঠিক খবর না নিয়ে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হলো? যার জন্য একজন সংসদ সদস্যকে জীবন দিতে হলো।’অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্রসচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
সবার আগে লেখাপড়া
ছাত্রলীগকে প্রধানমন্ত্রী
ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সবার আগে শিক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাই হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় পাথেয়। এ শিক্ষাই সকলকে এগিয়ে নেয়ার পাশাপাশি দেশ-জাতিকে উন্নত করবে।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজের এলাকায় কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি ছাত্রলীগ নেতা নিরক্ষর লোকজনকে খুঁজে বের করবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন। ছাত্রলীগকে সাক্ষরজ্ঞান কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পুনর্মিলনী ও মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
‘অশিক্ষিতদের হাতে দেশের ক্ষমতা পড়লে কি হয় তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি’ বলেও মন্তব্য করেন মহাসমাবেশের প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘জিয়া ছিলেন মেট্রিক পাস, তার স্ত্রী মেট্রিক ফেল। তারা কেন চাইবেন, এদেশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হোক! তাদের আমলে দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্র বাণিজ্য ছিল’।
‘মীরজাফর যেমন বেইমানি করে নবাব হতে চেয়েছিলেন, পারেননি, এদেশে কেউই এভাবে বেইমানি করে ক্ষমতায় থাকতে পারেননি’- যোগ করেন শেখ হাসিনা।
জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারি বা বেসরকারি, অন্তত একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় দেশের প্রতিটি জেলায় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ হতো প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড; বঙ্গবন্ধুর এটাই স্বপ্ন ছিল। আমাদের সে অবস্থান রয়েছে। বঙ্গবন্ধু এটাই করতে চেয়েছিলেন, আমরা সেভাবেই কাজ করে যাব।
তরুণদের দায়িত্ব নিতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে, তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে। তাদেরই আগামী দিনগুলোতে মূল ভূমিকা রাখতে হবে।
এখন বাস্তবেই বাংলাদেশ ডিজিটাল মত দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাস্তবেই এখন বাংলাদেশ ডিজিটাল, সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ।
এ সময় তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরেন।
জঙ্গিবাদ ও মাদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা কিভাবে জঙ্গিবাদে আসে, এটাই বুঝি না; এখন শিক্ষিতরাই জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে, আমাদের জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গঠনে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাদকের বিরুদ্ধে থাকারও আহ্বান জানাচ্ছি।