বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আবারও জমে উঠবে কারুশিল্প মেলা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পী, লোকসংগীত শিল্পীদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে সোনারগাঁয়ে শুরু হতে যাচ্ছে মাসব্যাপী ‘লোক কারুশিল্পমেলা ও লোকজ উৎসব’। আগামী শনিবার সকাল ১১টায় সোনারগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ মঞ্চে এ মেলা উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন সাংসদ লিয়াকত হোসেন ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আক্তারী মমতাজ। মেলা চলবে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মেলায় থাকবে ‘মৃৎশিল্পের প্রাচীন ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন’ শিরোনামে প্রদর্শনী। এ বছর চারজন কারুশিল্পীকে দেওয়া হবে ‘কারুশিল্পী পদক-২০১৬’। পাটজাত কারুশিল্পে সুফিয়া আক্তার, শীতল পাটি শিল্পে সবিতা মোদি, সরাচিত্রে সুধন্য চন্দ্র দাস এবং তামা-কাঁসা-পিতল মাধ্যমে মানিক সরকার এ পদক পাচ্ছেন। পদকের মধ্যে থাকবে একটি এক ভরি ওজনের স্বর্ণপদক ও ত্রিশ হাজার টাকা। মাসব্যাপী এ মেলা ও লোকজ উৎসবের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালায় নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে এ মেলা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মেলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলেন, ‘অতীত ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের নিজস্ব লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে অকৃত্রিমভাবে উপস্থাপন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যের অনন্য উপাদান পুনরুদ্ধার, নতুন প্রজন্মকে সেগুলোর সঙ্গে পরিচয় করানোর প্রচেষ্টায় এ মেলার আয়োজন। গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে থাকা অবহেলিত কারুশিল্পী, লোকসংগীত শিল্পীদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিভা বিকাশ ও প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়াই এ মেলা ও লোকজ উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য।’ তিনি জানান, মৃৎশিল্পের বিশেষ প্রদর্শনী উপলক্ষে গবেষণামূলক একটি ক্যাটালগ প্রকাশ করা হবে। প্রদর্শনীতে অংশ নেবেন রাজশাহী ও ঢাকা অঞ্চলের মৃৎশিল্পে প্রথিতযশা ৮ জন শিল্পী, পল্লি অঞ্চলগুলো মেলায় অংশ নিচ্ছেন ৫৪ জন কারুশিল্পী। নওগাঁ ও মাগুরার শোলাশিল্প, রাজশাহীর শখের হাঁড়ি, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, বেত ও বাঁশের কারুশিল্প, মুন্সিগঞ্জের শীতল পাটি, কুমিল্লার তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটির ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারুপণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরাকোটাশিল্প, ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশ ও শিকার কারুশিল্প এ মেলায় স্থান পাচ্ছে। মেলায় থাকবে ১শ ৯৩টি স্টল। এগুলোর মধ্যে কর্মরত কারুশিল্পীদের পণ্য প্রদর্শনীর ২৭টি, হস্তশিল্প ৪৬টি, পোশাক ৪৩টি, স্টেশনারি ও কসমেটিকস ৩৫টি, খাবার স্টল ২৫টি ও মিষ্টির স্টল থাকবে ১৭টি। বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালি গান, জারিগান, সারিগান, হাছন রাজার গান, লালন সংগীত, মাইজভান্ডারি গান, মুর্শিদি গান, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, কমলগঞ্জের-মণিপুরী, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তি-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনীর আয়োজন থাকছে এ মেলায়। মাসব্যাপী মেলা ও লোকজ উৎসবে শিল্পী ও সাংসদ মমতাজ, বারী সিদ্দিকী, ইন্দ্র মোহন রাজবংশী, দীপ্তি রাজবংশী, ফকির আলমগীর, কিরণ চন্দ্র রায়, অনিমা মুক্তি গোমেজ, ছোট খালেক দেওয়ানসহ প্রায় শতাধিক শিল্পী সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকসংগীত পরিবেশন করবেন।
আগামী শনিবার সকাল ১১টায় সোনারগাঁয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের লোকজ মঞ্চে এ মেলা উদ্বোধন
Share!