অমর একুশে বইমেলার আগে প্রস্তুতি নিতে ১০ প্রকাশনীর যৌথ আয়োজনে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে চলছে ১৩ দিনব্যাপী বই উৎসব। ছুটির দিনে গতকাল শুক্রবার মেলায় ছিল দর্শনার্থীর ভিড়। বইয়ের স্টল কর্মকর্তারা বলেছেন, বই বিকিকিনি চলছে মোটামুটি।নতুন বছরের প্রথম দিনেই শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে শুরু হয়েছে এই বই উৎসব। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, কথাপ্রকাশ, প্রথমা প্রকাশন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন, জাগৃতি প্রকাশনী, ডেইলি স্টার বুকস, নিমফিয়া পাবলিকেশনস, পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র ও বেঙ্গল পাবলিকেশনস।প্রকাশকেরা বলছেন, বইকে পাঠকের মুখোমুখি করতেই এই বইমেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য। একটা প্রকাশনীর পক্ষে এই ধরনের আয়োজন করা কঠিন। পাঠকও এক ছাতার নিচে বিভিন্ন বিষয়ের বিচিত্র বই পেয়ে থাকে। বই নিয়ে সারা বছর যেন কর্মকাণ্ড থাকে, এটাই তাদের আশা।বইমেলায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বই। ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশনে পাওয়া যাচ্ছে ভারিক্কি গবেষণাগ্রন্থ থেকে কিশোর উপন্যাস ও শিশুতোষ বই। আরও আছে জীবনীগ্রন্থ থেকে বিশ্লেষণধর্মী বই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার অন্তর। জাদুঘরের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। বইমেলা চলছে বলে ঢুঁ মারলেন। ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’ বইটা কিনলেন। বললেন, উদ্যোগটি ভালো।বই প্রদর্শনকক্ষের মাঝখানে রয়েছে তৈরি মঞ্চ ও গোটা পঞ্চাশেক চেয়ার পাতা। একেকটি প্রকাশনীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে এক দিন। প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলেই সেখানে প্রকাশনা উৎসব ও বইকেন্দ্রিক কর্মসূচি করতে পারেন। এ ছাড়া কোনো পাঠক চাইলেই বই কেনার আগে সেখানে বসে বইটি পড়ে দেখতে পারেন। ৯ জানুয়ারি প্রথমা প্রকাশন জীবনানন্দ দাশ পাণ্ডুলিপি পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। এর আগে গত বুধবার বিকেলে বই উৎসবে বিয়র্ন লোমবোর্গের বাংলাদেশ উন্নয়ন ভাবনার গবেষণা গ্রন্থ ‘বাংলাদেশ প্রায়োরিটিজ: ব্যয় এবং সুবিধার মাধ্যমে সেরা সমাধানের শ্রেণিবিন্যাস’-এর বাংলা ও ইংরেজি দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে অ্যাডর্ন পাবলিকেশন।১০ প্রকাশনীর যৌথ এই বইমেলা এবার নিয়ে সপ্তমবার মতো আয়োজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য যৌথভাবে প্রকাশকদের নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি হওয়া। প্রথমা প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ রাশেদ বলেন, একটা প্রকাশনীর পক্ষে একা বইমেলার আয়োজন করা কঠিন। এভাবে কম খরচে পাঠকের সামনে নিজেদের বইগুলো তুলে ধরা যায়। আর পাঠকও পায় বিচিত্র বিষয়ের বই।আয়োজনের তাৎপর্য কী, তা জানতে চাইলে জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক রাজিয়া রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বই তো সারা বছরের জন্য। শুধু ফেব্রুয়ারিতে যেন বই আবদ্ধ না হয়ে যায়। তাই আমরা চেষ্টা করছি এ ধরনের আয়োজনে করতে ২০১৫ সালে এই উদ্যোগ নেন অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন। প্রকাশকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্মিলিতভাবে এই আয়োজন শুরু করা হয়। রাজধানীসহ ফেনী, চাঁদপুর ও পাবনায় ছিল আয়োজনগুলো। সৈয়দ জাকির হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, একেক প্রকাশনীর বই একেক ধরনের। এই মেলা আয়োজনের উদ্দেশ্য, পাঠকের সামনে বই তুলে ধরা, যাতে সারা বছর বইয়ের সঙ্গে পাঠকের যোগাযোগ থাকে। তা ছাড়া একুশে বইমেলার আগে প্রস্তুতি হিসেবে এই মেলা সহায়তা করবে।শুরুর দিন থেকে বই বেচাকেনা চলছে মোটামুটি। প্রকাশক ও স্টলের বিপণন কর্মকর্তারা আশা করছেন, মেলা শেষ হওয়ার আগেই তাঁরা বই বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পার করতে পারবেন। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে এই বইমেলা। আর মেলার পর্দা উঠবে ১২ জানুয়ারি।গতকাল বিকেলে বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই এই বইমেলায় এসেছেন। এর মধ্যে জাদুঘরে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাই বেশি। অন্যান্য দিনের তুলনায় বিক্রিও চলছে ভালো। কেমন চলছে বেচাকেনা, এমন প্রশ্নে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বিক্রয় কর্মকর্তা মো. সোহেল সরকার বলেন, বিক্রি চলছে মোটামুটি। ছুটির দিনে বিক্রিটা বেশি।কলাবাগান থেকে এসেছেন কলেজ শিক্ষার্থী আমির হোসেন। স্টল ঘুরে ঘুরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ও হেনরির দুটি ছোটগল্পের বই কিনলেন। আরও কিনলেন কার্ল মার্ক্স ও চে গুয়েভারার জীবনীগ্রন্থ। আমির প্রথম আলোকে বলেন, ছোটগল্প পড়ে তাঁর বইপড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। ভবিষ্যতে তাঁর লাইব্রেরি গড়ার ইচ্ছা আছে।মিরপুর থেকে রফিকুল ইসলাম ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন। বইমেলা চলছে বলে ঢুঁ মারলেন। কয়েকটা স্টল ঘুরে ঘুরে দেখলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘুরতে এসে ভালোই হলো। কিছু বই দেখে গেলাম। আগামীকাল এসে কয়েকটি কিনব।’
অমর একুশে বইমেলার আগে প্রস্তুতি নিতে ১০ প্রকাশনীর যৌথ আয়োজনে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে চলছে ১৩ দিনব্যাপী বই উৎসব
Share!