Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

প্রথম ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবনা পাস হলো

আগের দিন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে জাতিসংঘে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভোটগ্রহণ স্থগিত হয়েছিল। কিন্তু ফিলিস্তিনি ভূখ-ে অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধে শনিবার নতুন করে একই প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং সেনেগাল প্রস্তাবটি উত্থাপন করে। প্রস্তাবটিতে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকলেও আমেরিকা ভোটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি। প্রস্তাবটি অনুমোদনের ঘটনাকে ফিলিস্তিনি নেতারা আন্তর্জাতিক আইনের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তবে জাতিসংঘের এই অবস্থানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  আল-জাজিরাশনিবার কণ্ঠভোটের মাধ্যমে ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের (স্থায়ী সদস্য ৫ এবং অস্থায়ী সদস্য ১০) ১৪টি ভোট প্রস্তাবনার পক্ষে পড়ে। গত আট বছরের মধ্যে এই প্রথম ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবনা পাস হলো। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন ভূখ-ে ১৯৬৭ সাল থেকে গড়ে তোলা ইসরাইলি বসতিসহ পূর্ব জেরুজালেমের কোনো আইনি বৈধতা নেই। এতে সব ধরনের ইসরাইলি বসতি স্থাপনের কার্যক্রম স্থগিত রাখার দাবি জানানো হয়।ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রস্তাবটি ইসরাইলি নীতির প্রতি একটি বড় আঘাত।’ ফিলিস্তিনের প্রধান আলোচক সায়েব ইরিকাত প্রস্তাবটি পাস হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজ আন্তর্জাতিক আইনের বিজয়ী হওয়ার দিন। সুসভ্য ভাষা এবং সংকট নিরসন প্রক্রিয়ার জয়। এটি ইসরাইলি চরমপন্থার সুস্পষ্ট প্রত্যাখ্যান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলকে বার্তা দিয়েছে, দখল কায়েমের মধ্য দিয়ে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় না। বরং শান্তি আনতে দরকার দখল বন্ধ করা এবং ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে ইসরাইলি রাষ্ট্রের পাশাপাশি শান্তিতে থাকতে দেয়া’।প্রসঙ্গত, ইসরাইলবিরোধী এই প্রস্তাবনা পাস নিয়ে গত কয়েকদিনে ব্যাপক নাটকীয়তা হয়েছে জাতিসংঘে। গত বুধবার পূর্ব জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলের অবৈধ স্থাপনা বন্ধের দাবিতে একইরকম প্রস্তাবনা এনেছিল মিসর। তখন নেতানিয়াহু আমেরিকার সাহায্য চায়। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রস্তাবটি তুলে নিতে মিসরকে চাপ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার ওই প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হওয়ার কথা থাকলেও মিসরের ‘আপত্তিতে’ সেটা স্থগিত করে দেয়া হয়।মিসরের ওই প্রস্তাবেও একইভাবে বলা হয়েছিল, ‘ইসরাইলের ওইসব বসতির কোনো বৈধতা নেই। আর সেটা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ এতে দাবি জানানো হয়, পূর্ব জেরুজালেমসহ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলি বসতি নির্মাণ জরুরিভিত্তিতে ও পূর্ণাঙ্গভাবে বন্ধ করতে হবে। তবে নিউজিল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং সেনেগাল নতুন করে একই প্রস্তাব উত্থাপন করায় সেই একই প্রস্তাবই পাস হলো।জাতিসংঘের ভোট লজ্জাজনক : নেতানিয়াহু
এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শনিবার বলেন, ‘ইসরাইলের বসতি স্থাপনের অবসান ঘটানোর জন্য জাতিসংঘ যে আহ্বান জানিয়েছে, সেটা লজ্জাজনক। ইসরাইল জাতিসংঘের প্রস্তাব মেনে চলবে না।’ প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় প্রতিক্রিয়ায় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইসরাইল লজ্জাকর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে। এর কোনো শর্ত মানতে আমরা বাধ্য নই।’ জাতিসংঘে ইসরাইলি দূত ড্যানি ড্যানন জানান, তাদের সরকার আশা করেছিল, আমেরিকা এই প্রস্তাবে ভেটো দেবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমেরিকার নতুন প্রশাসন এবং জাতিসংঘের নতুর মহাসচিব এসে এর পরিবর্তন করবেন।ভেটো না দেয়ায় তোপের মুখে ওবামাএদিকে, প্রস্তাবটি পাস হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার বদল ঘটিয়ে তার প্রশাসন ফিলিস্তিনি ভূখ-ে বসতি স্থাপন বন্ধের প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ থেকে বিরত থাকায় রিপাবলিকানদের চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার পল রায়ানসহ অনেকে তার বিরুদ্ধে ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য দায়ী করছেন। তাদের দাবি, লজ্জাজনকভাবে ইসরাইলকে বর্জন করেছেন ওবামা।পল রায়ান বলেন, ‘প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো না দেয়ার সিদ্ধান্ত পুরোপুরিই লজ্জাজনক।’ আরও এক ধাপ এগিয়ে রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন একে ‘ইসরাইলের প্রতি আঘাত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ২০১১ সালে একই রকমের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল আমেরিকা। তবে এবার শুরু থেকেই গুঞ্জন ছিল, বর্তমান ওবামা প্রশাসন এই প্রস্তাবে ভেটো দেয়ার ব্যাপারে রাজি নয়। এই কারণে ট্রাম্প এ ব্যাপারে ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হন। অনেকে বলছেন, ট্রাম্পের ব্যর্থতার নেপথ্যে ছিল বর্তমান আমেরিকা প্রশাসনের কঠোর সিদ্ধান্ত।ক্ষমতা গ্রহণের দিনই প্রস্তাব বদলে দেবেন ট্রাম্প এদিকে, আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথগ্রহণের দিনই জাতিসংঘ ভিন্ন পথ নেবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই। তবে ঠিক কীভাবে সেদিন এই প্রস্তাব বদলে যাবে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। শনিবার এক টুইট বার্তায় তিনি এমন প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top