খুলনার সিংহাসন কেড়ে নিল রংপুরসংক্ষিপ্ত স্কোর খুলনা টাইটান্স : ২০ ওভারে ১২৫/৭ (তাইবুর রহমান ৩২, রিকি ওয়েসেলস ২৭, আরিফুল হক ২২, মাহমুদউল্লাহ ১১, আব্দুল মজিদ ১০; আরাফাত সানি ২/১৬, শহীদ আফ্রিদি ২/৩০, রুবেল হোসেন ২/১৯) রংপুর রাইডার্স : ১৯ ওভারে ১২৯/৩ (সৌম্য সরকার ৩, মোহাম্মদ শাহজাদ ৩৭, মোহাম্মদ মিঠুন ৪৯*, শহীদ আফ্রিদি ২৬, লিয়াম ডসন ৫*; জুনায়েদ খান ১/২৩, মাহমুদউল্লাহ ১/১৪, বেনি হাওয়েল ১/৩১) ফল : রংপুর রাইডার্স ৭ উইকেটে জয়ী ম্যাচসেরা : শহীদ আফ্রিদি (রংপুর রাইডার্স)ক্রীড়া প্রতিবেদক সাদামাটা দল নিয়ে এবারের বিপিএলে বিস্ময় উপহার দিয়েছে খুলনা টাইটান্স, ম্যাচের পর ম্যাচ জয় তুলে নিয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বাধীন দলটি। পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ স্থানটাও দখলে নিয়েছিল তারা। তবে এক ম্যাচের বিরতিতেই দলটিকে সিংহাসন থেকে টেনে নামিয়ে দিয়েছে রংপুর রাইডার্স। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনা টাইটান্সকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে টেবিলের শীর্ষ স্থানটি দখলে নিয়েছে নাঈম ইসলামের নেতৃত্বাধীন দলটি।৬ ম্যাচে ৫টি জয় তুলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে জায়গা করে নেয়ার পথে এক পা বাড়িয়ে রাখল রংপুর রাইডার্স। সমান ১০ পয়েন্ট খুলনা টাইটান্সেরও, তবে একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে তারা। তবে সাধারণ মানের দল নিয়েও খুলনার সামগ্রিক পারফরম্যান্স দারুণ। ঢাকা ডায়নামাইটস, চিটাগং ভাইকিংসের মতো তারকাসমৃদ্ধ দলও হারাতে পারেনি তাদের। এবারের বিপিএলে একমাত্র রংপুরই হারের তিক্ত স্বাদ দিতে পেরেছে তাদের, সেটা দুইবারের দেখাতেই।ঢাকায় দুই দলের প্রথম দেখায় মাত্র ৪৪ রানে অলআউট হয়ে লজ্জাজনকভাবে হেরেছিল খুলনা টাইটান্স। এরপর জয়ের ধারায় ফেরা দলটি মঙ্গলবার প্রতিশোধের সুযোগ পেয়েছিল, কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ব্যাটে-বলে দাপুটে পারফরম্যান্সে মাহমুদউল্লাহ ব্রিগেডকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে রংপুর। আগে ব্যাট করে ৭ উইকেটে মাত্র ১২৫ রান তুলেছিল খুলনা। যে পুঁজি নিয়ে লড়াই করতে পারেনি দলটির বোলাররা। মিঠুন-শাহজাদদের ব্যাটে সেই রান অনায়াসেই (১৯ ওভারে) টপকে গেছে রংপুর।ম্যাচে দুটো করে উইকেট পাওয়া আরফাত সানি-শহীদ আফ্রিদি আর রুবেল হোসেনকে সামলাতে গলদঘর্ম হতে হয়েছে খুলনার ব্যাটসম্যানদের। সানির বাঁহাতি স্পিনের কোনো জবাবই যেন ছিল না দলটির দুই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার আর আব্দুল মজিদের কাছে। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে মজিদকে (১০) বোল্ড করার পর পঞ্চম ওভারে ফ্লেচারকে (৮) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে এলবিডবিস্নউর ফাঁদে ফেলেছেন সানি। এরপর আফ্রিদির শিকার মাহমুদউল্লাহ (১১)।দুরন্ত ছন্দে থাকা মাহমুদউল্লাহ ফিরতেই ৩/৩৮ বনে যায় খুলনার স্কোরকার্ড। ততক্ষণে ৭ ওভার পেরিয়ে গেছে। তখনই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল এই ম্যাচে খুব বেশিদূর যাওয়া হবে না খুলনার। তাইবুর রহমানকে (৩২) নিয়ে রিকি ওয়েসেলস ৫৬ রানের একটা জুটি গড়েছিলেন বটে, তবে রানের চাকায় জোর লাগাতে পারেননি। শেষের দিকে সেটা করতে গিয়ে রুবেলের ফুলটসে মিডউইকেট সীমানায় নাঈমের তালুবন্দি ওয়েসেলস (২৭)। রুবেলের ওই ওভারেই আউট খুলনার ঝুলিতে সর্বোচ্চ রানের জোগান দেয়া তাইবুর।ম্যাচে ১২০ রান তোলা নিয়েই তখন সংশয়ে ছিল খুলনা। এরপরও তারা ১২৫ পর্যন্ত গেছে আরিফুল হকের শেষ ৫ বলের ঝড়ে। আফ্রিদিকে পরপর দুই বলে দুটো ছক্কা হাঁকিয়েছেন ১৩ বলে ২২ রান করা এই ডানহাতি। কিন্তু তার ওই শেষের চেষ্টায়ও রংপুরকে বেঁধে রাখার মতো পর্যাপ্ত পুঁজি পায়নি খুলনা। কোনোরকম চাপ না নিয়ে হেসেখেলেই জয়ের বন্দরে নোঙর করেছে রংপুর।স্বল্প পুঁজি নিয়েও শুরুতে সৌম্য সরকারের বিদায়ে একটা আশা দেখেছিল খুলনা। তবে শাহজাদ-মিঠুনের ৭৪ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি সেটাও শেষ করে দিয়েছে। ৩৮ বলে ৩৭ রান করে মাহমুদউল্লাহর শিকার হয়েছেন শাহজাদ। এরপর মিঠুনের সঙ্গে দর্শকদের আনন্দ জুগিয়েছেন আফ্রিদি, ২০ বলে ২৬ রান করেছেন এই পাকিস্তানি। এর আগে ৩০ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন, অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছেন তিনিই।
আফ্রিদি শেষবেলায় নিজের উইকেটটি ছুড়ে দিয়ে না এলে জয়ের ব্যবধানটা আরেকটু বড়ই হতো রংপুরের। তাই দারুণ জয়ের পরও কিছুটা আক্ষেপ থাকতেই পারে সমর্থকদের। একটু আক্ষেপ হয়তো হচ্ছে মিঠুনেরও! একটি মাত্র রানের জন্য চলতি আসরের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরিটা পাওয়া হয়নি এই ডানহাতির, দলকে জিতিয়ে যখন মাঠ ছাড়ছেন ৪১ বল খেলে ১টি চার আর ৩টি ছক্কায় তখন ৪৯ রানে অপরাজিত তিনি।
খুলনার সিংহাসন কেড়ে নিল রংপুর
Share!