রাজধানীর বুকে যে কয়েকটি নয়নাভিরাম এবং গোছালো বিনোদন স্পট রয়েছে তার মধ্যে হাতিরঝিল অন্যতম। ছুটির দিন কিংবা অবসর বিকালে মনকে জুড়িয়ে নিতে সবার পছন্দ থাকে হাতিরঝিলের মনোরম পরিবেশ।এ সৌন্দর্য আরও বাড়াতে চেষ্টার কমতি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। হাতিরঝিলের উন্নয়নে একের পর এক নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে চমকে দিচ্ছে রাজধানীবাসীকে। এ চমকে এবার যোগ হচ্ছে বিদ্যুতের তারহীন হাতিরঝিল। দৃশ্যমান থাকবে না বিদ্যুতের কোনো খুঁটি। সব চলে যাবে মাটির নিচে।
পাশাপাশি ধানম-ি এলাকার সব বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন মাটির নিচে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
শুধু হাতিরঝিল ও ধানম-ি নয়, পর্যায়ক্রমে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের সব বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন মাটির নিচে আনতে ২০ হাজার ৫০১ কোটি ৫২ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)।বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আধুনিক করতে এটাই এ যাবৎকালের সব থেকে বড় ব্যয়ের উদ্যোগ। ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী রমিজ উদ্দিন সরকার বলেন, হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় ১০ থেকে ১২টি বিদ্যুতের টাওয়ার রয়েছে, এগুলো আর থাকবে না। কারণ হাতিরঝিলে সব বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন মাটির নিচে আনা হবে। ফলে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার সৌন্দর্য কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।তিনি বলেন, পাশাপাশি ধানম-ি এলাকায়ও সব বিদ্যুৎ লাইন মাটির নিচে স্থানান্তর করা হবে। যাতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারা যায়। সেই লক্ষ্যে সঞ্চালন লাইন মাটির নিচে স্থানান্তর করে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা আরও আধুনিক হবে। সরকার ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ ধারাবাহিকতায় সাড়ে ২০ হাজার কোটি টাকা সঞ্চালন লাইন বাবদ লাগবে বলে জানায় ডিপিডিসি।বিদ্যুৎ উৎপাদনের ধারাবাহিকতায় বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন লাইন নির্মাণ, সংস্কার এবং নতুন উপকেন্দ্র নির্মাণ বাবদ এ ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় সঞ্চালন লাইন আধুনিক করা হবে। প্রাথমিকভাবে ধানম-ি এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব বিদ্যুতের তার ও লাইন মাটির নিচে স্থানান্তর করা হবে।
‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি’ প্রকল্পের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনে এ ব্যয় প্রস্তাব করেছে ডিপিডিসি। জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় ডিপিডিসি। এ ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন পাঁচ হাজার ৫৩৬ কোটি ৯৬ লাখ, প্রকল্প সাহায্য ১৩ হাজার ৮৪৪ কোটি ২৯ লাখ এবং এক হাজার ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ডিপিডিসি খাত থেকে মেটানো হবে। প্রকল্পের আওতায় ৬৪টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও নির্মাণ করা হবে।
ডিপিডিসির প্রধান প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, ‘মানুষ যাতে কোয়ালিটি বিদ্যুৎ পায় সেজন্য পর্যায়ক্রমে ডিপিডিসি এলাকার সব সঞ্চালন লাইন মাটির নিচে স্থানান্তর করব। কারণ শহরে বিদ্যুতের তার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে দেখতে অনেক খারাপ লাগে। পর্যায়ক্রমে ডিপিডিসির সব বৈদ্যুতিক লাইন মাটির নিচে স্থানান্তর করব।’
সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে ডিপিডিসির প্রস্তাবে প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (শিল্প ও শক্তি) জুয়েনা আজিজের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাথমিকভাবে প্রকল্পে কঠিন শর্তে ঋণ দিতে চেয়েছিল চীন। ঋণের বিষয়টি পিইসি সভায় প্রধান আলোচনা হয়ে দাঁড়ায়।
ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির বিষয়ে ইতোমধেই চীনের সঙ্গে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হবে। নমনীয় শর্তে ঋণ (কনসেশনাল) দিতে রাজি হয়েছে চীন সরকার। এখন থেকে দেশটি মাত্র দেড় শতাংশ সুদ ও সাত বছরের রেয়াতকাল সুবিধাসহ ২৭ বছরে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেয়ার কথা জানিয়েছে। হাতিরঝিল ও ধানম-ি এলাকায় মাটির নিচে বিদ্যুৎ লাইন আনতে প্রকল্পের আওতায় ১৩ হাজার ৮৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা ঋণ দেবে চীন
এবার যোগ হচ্ছে বিদ্যুতের তারহীন হাতিরঝিল
Share!