Monday , 23 December 2024
সংবাদ শিরোনাম

পৃথিবীতে এখন শতকরা ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ জন তরুণ-যুবক এরাই আগামীর পৃথিবী গড়ার কারিগর

পৃথিবীতে এখন শতকরা ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ জন তরুণ-যুবক। এরাই আগামীর পৃথিবী গড়ার কারিগর। পবিত্র কোরআন, সহিহ হাদিস ও ইসলামের ইতিহাস অধ্যয়ন করলে যেখা যায়, ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে।এ পৃথিবীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন প্রবাহের ধারাকে মোটামুটি তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এই তিনকালের মধ্যে সকল বিবেচনায় যৌবনকাল হলো- শ্রেষ্ঠ সময়। শৈশবে মানুষ থাকে অসহায় ও পরনির্ভর। পিতা-মাতা ও অন্যের সহযোগিতা ব্যতীত সে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না এবং এ সময় তার কোনো চিন্তার সুষ্ঠু বিকাশ ঘটে না। অনুরূপভাবে বার্ধক্যেও সে অসহায় দুর্বল ও পরনির্ভর হয়ে পড়ে। মনের ইচ্ছা থাকলেও সে সবকাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারে না। এমনকি চিন্তাশক্তির বিলোপ পর্যন্ত ঘটে থাকে। কিন্তু যৌবনকাল এ দু’য়ের ব্যতিক্রম। যৌবনকালে মানুষ অসাধ্য সাধনে আত্মনিয়োগ করতে পারে। এটাই যৌবনের ধর্ম। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যৌবনকালকে গণিমতের মাল তথা মূল্যবান সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে তা মূল্যায়ন করার তাগিদ দিয়েছেন। কেননা এ সময় সম্পর্কে পরকালে জবাবদিহিতা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, আমর ইবনু মায়মুন আল আওদি (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) জনৈক ব্যক্তিকে উপদেশস্বরূপ বলেন, পাঁচটি বস্তুর পূর্বে পাঁচটি বস্তুকে গণিমত মনে করো। যথা- ১. তোমার বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে, ২. পীড়িত হওয়ার পূর্বে সুস্বাস্থ্যকে, ৩. দারিদ্র্যতার পূর্বে সচ্ছলতাকে, ৪. ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে ও ৫. মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে।’ –তিরমিজি আল্লাহ প্রদত্ত যৌবনের এই মহা মূল্যবান সময়কে আল্লাহ হুকুম মতো পরিচালনা না করলে কড়ায়-গন্ডায় হিসাব দিতে হবে কঠিন কিয়ামত দিবসে। যৌবনের এই সোনালি সময়ে মানুষের দেহ থাকে সুস্থ, সবল, শক্ত ও উদ্দীপনায় পূর্ণ। এ সময় তার হাতে থাকে উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত সময়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অধিকাংশ মানুষই তা সুষ্ঠুভাবে ব্যয় করে না। প্রসঙ্গে হাসিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, দু’টি নিয়ামতের বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকার মধ্যে রয়েছে। তাহলো- সুস্থতা ও সুস্বাস্থ্য। -সহিহ বোখারি: ৬৪১২ যৌবন যেমন সুস্থতা ও পূর্ণতার স্বরূপ, তেমনি পরিপূর্ণ জীবন ও প্রাণেরস্বরূপ। তাইতো ইসলাম শিশু, পঙ্গু, অসুস্থ, বৃদ্ধ ও নারীদের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম ফরজ করেনি। সশস্ত্র সংগ্রাম ফরজ করা হয়েছে যুবকদের ওপর।

শুধু ইসলাম ধর্ম নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যৌবনের জয়গান গেয়েছেন। প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকদের সাহিত্যকর্মের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে আছে এই যৌবনের উৎসাহ ও উদ্দীপনাময় বক্তব্যের সমাহারে। বর্তমান ঘুণেধরা এই সমাজের অশ্লীলতা, নগ্নতা, বেহায়পনা, নির্লজ্জতা ও ব্যভিচার যুবসমাজই পারে দূর করতে। যুবকরাই পারে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, ভীরুতা ও বাতিলের কালো থাবা থেকে জাতিকে মুক্ত করে অন্ধকারের বদ্ধ দুয়ার খুলে ঝড়ের বেগে এগিয়ে গিয়ে আলোকিত দিন গড়তে।অন্যদিকে যোগ্য নেতৃত্ব ও কর্মতৎপরতার মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠন এবং দেশের উন্নতি-অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে যুবকদের ভূমিকার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য তাদেরকে উপযুক্ত জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যোগ্য হতে হবে। যাবতীয় ত্রুটি-দুর্বলতা ও আলস্য-তন্দ্রা দূর করে সাহসি হতে হবে। নৈরাশ্য ও হতাশাকে পদদলিত করে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে সম্মুখপানে এগিয়ে যেতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে। ইতিহাস সাক্ষী, তাকওয়াবান যুবকদের দ্বারা পৃথিবী উপকৃত হয়েছে এবং পৃথিবীতে উত্তম আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার পথভ্রষ্ট যুবকদের দ্বারা পৃথিবীর বহু সভ্যতা ধ্বংস হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাকওয়াবান যুবকদের নিয়ে বদর, ওহুদ, খন্দক ও তাবুকসহ অন্যান্য যুদ্ধে বিজয়লাভ করেছেন। চীন বিপ্লব, ফরাসি বিপ্লব এবং বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার যুদ্ধেও লাখ লাখ যুবকের আত্মত্যাগ ও ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে।মোটকথা, পৃথিবীর প্রতিটি বিভাগেই যুবসমাজের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তাই আল্লাহর দেওয়া পবিত্র আমানত যৌবনের প্রতিটি ধাপ, মেধা, শ্রম ও প্রতি ফোঁটা রক্ত মানুষ সত্যিকার অর্থে আল্লাহর পথে ব্যয় করলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কল্যাণে ভরে যাবে এবং পরকালের ভয়াবহ দিনে আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় লাভের সৌভাগ্য অর্জন করবে। যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। অন্যথায় জাহান্নামের লেলিহান শিখায় অগ্নিদগ্ধ হতে হবে।

তাই আসুন, ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে আল্লাহ প্রদত্ত অমূল্য সম্পদ যৌবনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে তার যথাযথ সদ্ব্যবহার করে জান্নাতি যুবকদের কাতারে শামিল হতে সর্বাত্মক চেষ্টা করি।

Share!

About newsfair

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

Scroll To Top