নূর ভাই তো আপনাকে সময় খুব একটা দেননি বলে মনে হয়। জীবনটা কেমন কেটেছে?শাহীন আক্তার: ভালোই কেটেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই।নূর: আমার সন্তানেরা যখন বড় হচ্ছে, তখন আমি তো অভিনয়ে ব্যস্ত। শুটিংয়ের কারণে পাঁচ-সাত দিনের জন্য বের হয়ে যেতাম। বাচ্চাদের বড় করার ক্ষেত্রে যা করার ও–ই করেছে।
আপনাদের দিন কাটে কী করে? নূর ভাই তো এখন মন্ত্রী। দেখাসাক্ষাৎ হয়?
নূর: ও আমার থেকে আগে ঘুম থেকে ওঠে। আমাদের দেখা হয় রাতে। খাবার টেবিলে আমাদের কথা হয়। আমার ছেলে ও ছেলের বউ লন্ডনে থাকে। আমার মেয়ের পিএইচডি করার পরিকল্পনা।
শাহীন: বিয়ের আগে আমাদের পরিচয় ছিল না। আমার শাশুড়ি, ননদ মিলে বিয়ে ঠিক করেছেন। অভিনয় যাঁরা করেন, তাঁদের সবাইকেই আলাদা ভালো লাগে। আমার যখন বিয়ে হয়, তখন সে অভিনয়ে খুব ব্যস্ত। সবাই ওকে চেনে।
সময় দিতে না পারার কারণে কোনো খেদ নেই? খারাপ লাগে না?
শাহীন: সবারই টুকটাক খারাপ লাগে। একটা বয়সে একেক রকম প্রত্যাশা থাকে।
পরিবারের সবাই মিলে বেড়াতে যান না?
শাহীন: আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে বাইরে গিয়েছি। আমাদের সে সময়গুলো খুব দারুণ কাটত।
নূর: আমরা বছরে একবার বা দুবার দেশের বাইরে যাই। ঈদুল ফিতর আমাদের বাইরে কাটে। ঈদুল আজহায় নীলফামারীতে থাকি।
নিজেকে কি মন্ত্রীর বউ বলে মনে হয়?
শাহীন: নাহ্, এটা কিছু মনে হয় না। গাড়িতে উঠলে একটু বোঝা যায়। গাড়িতে তখন পতাকা থাকে তো। আমরা যে বাড়িতে আগে ছিলাম, এখনো সেই বাড়িতে আছি। তবে এখন মনে হয় ব্যস্ততা একটু বেড়েছে।
তখন কি মনে হয় অভিনেতার বউ থাকাটাই ভালো ছিল?
শাহীন: একেক সময়ে অনুভূতি একেক রকম।
নূর: মন্ত্রীর ব্যাপারটা মাথায় থাকে না। এটা একটা দায়িত্ব মনে করি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি তা পালন করছি। মন্ত্রী মানে তো অন্য গ্রহ থেকে আসা কেউ নন।
ভাবির দিনগুলো কাটে কীভাবে?
শাহীন: হাসপাতালেই বেশি সময় কাটে। সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন চেম্বারে সময় দিই। আমি ততক্ষণই চেম্বারে থাকি যতক্ষণ আমার ভালো লাগে।
দেশের মানুষ আসাদুজ্জামান নূরকে বাকের ভাই নামেও চেনেন। আপনি তাঁকে কী নামে ডাকেন?
নূর: নাম ধরে ডাকে না কখনো। তবে অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় নূরের সঙ্গে কথা বলতে বলে। (স্ত্রীর হাসি) আমি অবশ্য নাম ধরে ডাকি। এটা হয়তো বয়সের তারতম্যের কারণে।
শাহীন: আমার ছেলে একটা কথা বলে, মা যখন কাউকে অ্যাড্রেস করে কিছু বলে না, বোঝা যাবে, এটা বাবাকে বলা হচ্ছে। (হাসি)
নূর: আমার ছেলে এমনিতে কম কথা বলে। একবার বাবা দিবসে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তখন সে বলেছিল, বাবার সঙ্গে আমার মিল হলো যে বাবাও বাবা, আমিও বাবা।
জন্মদিনে নূর ভাইয়ের প্রতি কী বলবেন?
শাহীন: একটু নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ও এমনিতে নিজের প্রতি খেয়াল কম রাখে। সবার প্রতি তার খুব খেয়াল। যা-ই হোক, ধুমধাম করে জন্মদিন উদযাপন করলে মনে হয়, বয়স বেড়ে যাচ্ছে।
নূর: আমরা একেবারে ঘরোয়াভাবে জন্মদিন উদযাপন করি। আমার মা-বাবাও ছোটবেলা থেকে জন্মদিন খুব একটা উদযাপন করতেন না। বাড়িতে একটু ভালো খাওয়াদাওয়া হতো। আমাদের সন্তানদেরও সেভাবে জন্মদিন উদযাপন করা হয় না।
এখন তো মন্ত্রী। জীবনের স্বাভাবিক বিষয়গুলো কি সব সময় উপভোগ করতেন?
নূর: ছাত্রাবস্থায় বাসে চলতাম। আমার গাড়ি হয়েছে অনেক পরে। আমি বিদেশে গেলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। রাস্তায় হাঁটি। বাসে চড়ি। ঘুরিফিরি, সিনেমা দেখি। যা খুশি তা-ই খাই। পরের ছুটিতে এমন একটা জায়গায় যাব, ছোট শহর, যেখানে নিরিবিলি। আমার বেড়ানোর অভ্যাস বহুকালের। আমার বন্ধু আলী যাকের তো বলে, নূরের পায়ের সঙ্গে চাকা লাগানো আছে (হাসি)। দেশের বাইরে নয়, বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে আমি যাইনি।
বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো লাগে কোন জায়গা?
নূর: বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে বরিশালের গ্রাম। এখনো সুযোগ পেলে যেতে ইচ্ছা করে। আমার নানাবাড়িও তো ওদিকে। জীবনানন্দ দাশকে এবং তাঁর কবিতাকে বুঝতে হলে বরিশালে যেতে হবে।
পাগল ভক্তের পাল্লায় পড়েছেন?
নূর: আমি ভারসাম্য রক্ষা করে চলি। কাউকে প্রতারণা করার চেষ্টা করিনি। আবার কাউকে অনেক বেশি আশাও দেখাইনি। যাকে যেখানে যেভাবে রাখা দরকার, তাকে সেখানেই রেখেছি।
শাহীন: আমার মনে হয় স্ত্রীকে পাশে বসিয়ে এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন।
বিয়ের পর প্রেমের পাল্লা কমে গেছে?
নূর: ভক্তরা ডেসপারেট হয়। তারা যুক্তির ধার ধারে না। কিন্তু আমি কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি বলে মনে হয় না।
ভাবি, এত দিন পর্যন্ত এই মানুষটার সঙ্গে আছেন, তাঁর মূল্যায়ন করুন।
(এ সময় আসাদুজ্জামান নূরকে অন্য ঘরে যেতে বলা হয়। তিনি স্বচ্ছন্দে চলে যান)
শাহীন: নিজেদের কাছের মানুষকে ‘ভালো’ কেমন করে বলে। বাইরের লোকজন যখন তাকে নিয়ে ভালো কথা বলে, তখন ভালোই লাগে। ও খুব ভালো আসলে। আসলে আমি খুব গর্বিত। ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে সে অনেক কিছু করে। আমি এই কথাটা সব সময় বলি, ও ছেলেমেয়ের জন্য যা করে, তা আমি কোনো বাবাকে করতে দেখিনি। যে কথা আমি অনেক জায়গায় বলি: যে বাবা ছেলেমেয়ের জন্য অনেক কিছু করেন, সেই বাবা কখনোই খারাপ হতে পারেন না। নীলফামারীর মানুষের প্রতিও তার অন্য রকম ভালোবাসা আছে। এত মানুষের জন্য কাজ করে একটা মানুষ, তার তো ঘরে সময় দেওয়াটা একটু কমই হবে। এটার জন্য আমার খারাপ লাগে না। তবে বিয়ের প্রথম দিকে একটু একটু খারাপ লাগত।
বিয়ের সময় আপনার বয়স কত ছিল?
(এ সময় আসাদুজ্জামান নূর ফিরে আসেন)
শাহীন: আমার বয়স কমই ছিল।
নূর: ও আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। (হাসি)
শাহীন: আমি নিজেও মনে করি, একটা মানুষকে মানুষের জন্য কাজ করা উচিত। সব সময় সম্মান নিয়ে জীবন কাটানো অনেক বড় ব্যাপার।
নূর: আমি কিন্তু ওর সঙ্গে একদম জীবনের অর্ধেক সময় পার করে দিলাম। আমি বিয়ে করেছি ৩৫ বছর বয়সে। তার আগে বিয়ে করার সাধ্য ছিল না, আই মিন, সামর্থ্য ছিল না। (হাসি)
জীবনের অর্ধেক সময় একসঙ্গে পার করে দিলাম
Share!