গ্রামীণ অর্থনীতিতে পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান বেশি। এতে ৫৩ শতাংশ নারীর অবদান থাকলেও পুরুষের অবদান ৪৭ শতাংশ। এরপরও নারী কৃষকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি নেই। রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড বিতরণ করা হলেও নারী কৃষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও নারী মৈত্রী যৌথ উদ্যোগে আজ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। ‘কৃষিতে নারীর অবদানের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি প্রদান, ভূমিতে নারীর সমঅধিকার এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হোক’ শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কৃষিতে নারীর অবদানকে অবৈতনিক পারিবারিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়। যদিও নারীরা খামার ও পরিবারের উৎপাদনের জন্য দ্বিমুখী চাপ সহ্য করেন। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রমশক্তি যুক্ত হয়েছে। যার প্রায় ৫০ লাখই নারী শ্রমিক। ২০০৫-০৬-এর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের ১ কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের প্রায় ৭৭ শতাংশই গ্রামীণ নারী, যাঁরা মূলত কৃষিকাজ, পশুপালন, হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ইত্যাদি কৃষিসংক্রান্ত কাজে নিয়োজিত।সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারী মৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহিন আকতার। বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান, বিআইডিএসের সাবেক জ্যেষ্ঠ (গবেষণা) ফেলো ড. প্রতিমা পাল-মজুমদার, অক্সফামের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা মেহবুবা ইয়াসমীন।সংবাদ সম্মেলনে বিআইডিএসের ফেলো ড. এম আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদান ৫৩ শতাংশ। এর বিপরীতে পুরুষের অবদান ৪৭ শতাংশ। এরপরও রাষ্ট্রীয়ভাবে নারীর স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন নেই। রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড বিতরণ করা হলেও নারী কৃষকদের ভাগ্যে তা জোটেনি। তা ছাড়া নারী কৃষিশ্রমিকের প্রতি মজুরিবৈষম্য এখনো অব্যাহত আছে। অথচ নারী শ্রমশক্তির ৬৮ শতাংশই কৃষি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজের সঙ্গে জড়িত। এদিকে ভূমিতেও নারীর সমঅধিকার নেই। বাজারে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রেও নারীদের রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা।নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, বিদ্যমান সমাজকাঠামো, প্রচলিত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কৃষিতে নারীর অবদানকে অবহেলা করার সাধারণ প্রবণতা থেকেই কৃষিতে নারীর অবদান স্বীকৃতি পাচ্ছে না।অক্সফামের জ্যেষ্ঠ নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা মেহবুবা ইয়াসমীন বলেন, কৃষিতে গ্রামীণ নারীর অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া ও উপযুক্ত সম্মান জানানোর সময় এসেছে এখন। গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়ন ছাড়া দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য ঘোচানোর চেষ্টা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।সংবাদ সম্মেলনে, নারী কৃষকদের স্বীকৃতিসহ তাঁদের রাষ্ট্রীয় প্রণোদনা ব্যবস্থার আওতায় আনা, পারিবারিক কৃষি কার্ড প্রবর্তন করা, সর্বজনীন উত্তরাধিকার আইন প্রণয়ন করা, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন সক্ষমতা তৈরি করাসহ কৃষি সম্প্রসারণ সেবা নারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া, বাজারে নারীর প্রবেশগম্যতা বাড়াতে বাজারের নির্দিষ্ট স্থান আলাদাভাবে নারী কৃষকদের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানানো হয়।
Share!