আটলান্টিক মহাসাগরের ক্যারিবীয় সাগরে ত্রিভুজ আকৃতির ১১৪ লাখ বর্গ কিলোমিটারের অঞ্চলটি হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল। এটির এক প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা আরেক প্রান্তে পুয়ের্তো রিকো এবং অপর প্রান্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপ অবস্থিত।রহস্যময় এই অঞ্চলটির সঠিক রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। সেই কলম্বাসের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অঞ্চলটির রহস্যই থেকে গেছে। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে কোনো জাহাজ প্রবেশ করলে তা রহস্যজনকভাবে কেন যে হারিয়ে যায়, সেটা অজানা থেকে গেছিলো।তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল নিয়ে তৈরি সব রহস্য আর প্রশ্নের নতুন সমাধান দিচ্ছেন এক দল বিজ্ঞানী।উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পশ্চিম অংশের ত্রিকোণাকৃতি জায়াগায় বিভিন্ন সময় উধাও হয়ে গিয়েছে জাহাজ থেকে বিমান। ‘ডেভিলস ট্রায়াঙ্গাল’ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা করেও ‘কেন’র উত্তর পাওয়া যায়নি।এবার বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের পিছনে রয়েছে এক রকম ষড়ভুজাকৃতি মেঘ (হেক্সাগোনাল ক্লাউড)। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের বারমুডা দ্বীপে ২০ থেকে ৫৫ মাইল জুড়ে ষড়ভুজাকৃতি মেঘ তৈরি করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ু। যার গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭০ মাইল। এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বায়ুকে বলা হয় ‘এয়ার বম্ব’। এই বায়ু প্রায় ৪৫ ফুট উচ্চতার ঝড় তৈরি করতে পারে। যার ফলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল দিয়ে যাওয়া জাহাজ বা প্লেন উধাও হয়ে যায়।কিন্তু উধাও হয়ে কোথায় তার শেষ ঠিকানা হয় সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট নন।এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল সম্পর্কে কিছু অবাক করা তথ্য: ১. আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ৪ লক্ষ ৪০ হাজার মাইল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানের সম্মিলিত এলাকার চেয়েও বড়। ২. বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কেন্দ্র কোনও নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়। এই ট্রায়াঙ্গেলের বাইরেও এর রহস্যময় প্রভাব বহুবার অনুভূত হয়েছে। ৩. বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে হারিয়ে যাওয়া বিমান বা জাহাজের কোনও ধ্বংসাবশেষ আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
৪. এই ত্রিকোণ রহস্যের মধ্যে পড়ে শেষ একশো বছরে অন্তত ১০০০ মানুষ হারিয়ে গিয়েছেন। ৫. অনেক মানুষ এখানে ‘বৈদ্যুতিক কুয়াশা’ও দেখেছেন বলে দাবি করেছেন। যার মধ্যে পড়ে একাধিক বিমানের রাডার সংযোগ বেশ কিছুক্ষণের জন্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথাও জানিয়েছেন অনেক বিমানচালক। ৬. ১৯৪৫-এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পাঁচটি মার্কিন বোমারু বিমান এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। নিখোঁজ পাঁচটি বিমানের সন্ধানে আরও তিনটি বিমান পাঠানো হয়। ফোর্ট লডরডেলের বিমানঘাঁটিতে ফেরেনি এই বিমানগুলিও। ৭. ১৪৯২ সালে স্পেনীয় নাবিক এবং ভূপর্যটক ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রথম এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে লেখেন। তার জাহাজের কম্পাসও বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে অকেজো হয়ে যায়। সে যাত্রায় কোনও ক্রমে উদ্ধার পান তিনি। ৮. অসংখ্য রহস্যে মোড়া এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গালকে ‘ডেভিল্স ট্রায়াঙ্গাল’ও বলা হয়। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালে চৌম্বকীয় উত্তর দিকের পরিবর্তে প্রকৃত উত্তর দিক নির্দেশিত হয়, যা জাহাজের নাবিকদের বিভ্রান্ত করে