বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশে গ্রামের দরিদ্র নারীদের অবস্থার পরিবর্তন ও দারিদ্র্যবিমোচনে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকা দেখে ভীষণ খুশি হয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি কলেরা ও যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অনুকরণীয় সাফল্য এবং মানুষের কঠোর পরিশ্রমের প্রশংসা করেছেন।তকাল মঙ্গলবার বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাকুদিয়া ও উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রাম পরিদর্শনকালে এমন মন্তব্য করেন।বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) মাধ্যমে পরিচালিত ‘নতুন জীবন’ নামক প্রকল্প পরিদর্শন করে জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘আমরা জানি বাংলাদেশের মানুষ খুবই পরিশ্রমী। তাঁরা ভালো কাজ করতে জানেন, সহজে পিছিয়ে পড়েন না। তাঁদের এই অবস্থা দেখে আমরা উৎসাহিত হয়েছি। তাই আমরা আরও অর্থায়ন করব।’জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘দরিদ্র নারীদের অবস্থার পরিবর্তন দেখে আমি খুবই খুশি হয়েছি। এই দরিদ্র নারীদের কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। আমরা বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থায়ন করেছি। ফলে তাঁদের মাছ চাষ, গাভি পালনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ পেয়ে তাঁরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।’দরিদ্র নারীদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় শেষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি সুবিধাভোগী নারীদের সঙ্গে আলাপ করে আনন্দিত হয়েছি। এই নারীরা আত্মপ্রত্যয়ী। আমি তাঁদের আরও উন্নয়ন দেখতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, প্রকল্প শুরুর আগে এখানকার দরিদ্র নারীদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেত না। বর্তমানে তারা স্কুলে যাচ্ছে। তারা ভালোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।মতবিনিময়ের পর জিম ইয়ং কিম রাকুদিয়া গ্রামের শিউলি বেগম ও কোহিনুর বেগমের গাভির খামার, কম্পোস্ট সার প্রস্তুত প্রকল্প, দলীয়ভাবে মাছ চাষ প্রকল্প পরিদর্শন করেন।দক্ষিণ রাকুদিয়ার অনুষ্ঠানে সুবিধাভোগী নারী মণি রানী শীল জানান, দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ গ্রামে ‘নতুন জীবন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। গ্রামে মোট ৪৭৬টি পরিবার রয়েছে। এর মধ্য থেকে দরিদ্র, অতিদরিদ্র, মধ্যবিত্ত ও বিত্তবান পরিবার চিহ্নিত করা হয়। এরপর ১৯৮ জন দরিদ্র ও অতিদরিদ্র নারীকে সমিতি গঠনের মাধ্যমে শুরু হয় প্রকল্পটির কাজ। সমিতির নারীরা আয় বর্ধনমূলক কাজে ঋণ-সুবিধা নেন। তা সবজি ও মাছ চাষ, গাভি পালন, কম্পোস্ট সার প্রস্তুত এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের কাজে লাগান। ফলে এ প্রকল্পের সব নারীই এখন স্বাবলম্বী।বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট রাকুদিয়া থেকে উজিরপুর উপজেলার ভরসাকাঠি গ্রামে যান। সেখানে তিনি ভরসাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন শেল্টার (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র) পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি নারকেলগাছের চারা রোপণ করেন।মতবিনিময়কালে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি নিজে একজন চিকিৎসক। বাংলাদেশ কলেরা ও যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে; যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুকরণ করে সুফল পেয়েছে।’ তিনি বলেন, এ দেশে দারিদ্র্যবিমোচনে গ্রামীণ নারীদের অগ্রণী ভূমিকা রয়েছে। এসব নারী দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।এ সময় স্থানীয় বক্তারা এলাকায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালুর দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেন, আপনাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি সরকারের মাধ্যমে আমাদের কাছে তুলে ধরুন, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সাংসদ তালুকদার মো. ইউনুস, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর সিমিয়াও ফান, ইসিআরপির প্রকল্প পরিচালক আ. রশিদ, এলজিইডির অতিরিক্ত প্রকৌশলী ফরাজী সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ, স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষিকা ফেরদৌসী আরা প্রমুখ।সভা শেষে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ও প্রসূতি কক্ষ পরিদর্শন করেন এবং কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেন।পরে জিম ইয়ং কিম বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গ্রামীণ শক্তি ও টিএমএসএস পরিচালিত সৌরশক্তি প্রকল্পের সুফলভোগী দম্পতি সত্তার ব্যাপারী ও মমতাজ বেগমের বাড়িতে যান এবং পরিবারটির সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেন।এ সময় উজিরপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঝুমুর বালা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সরোয়ারসহ জিম ইয়ং কিমের সফরসঙ্গীরা উপস্থিত ছিলেন।বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম গতকাল সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে বরিশাল বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রাম হয়ে উজিপুরের ভরসাকাঠি গ্রামে যান। বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তিনি বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
Share!